নতুন ব্যবসা শুরু করছেন বা ইতিমধ্যেই কোনো উদ্যোগে যুক্ত আছেন? তাহলে কিছু ঝুঁকি ও ভুল আছে, যেগুলো সময়মতো না বুঝলে পুরো ব্যবসাই লোকসানের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এই ১২টি সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলতে পারলেই ব্যবসা হবে স্থায়ী ও লাভজনক।
ব্যবসায় সাফল্যের মূলমন্ত্র
বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ভুল থেকে শিক্ষা নেন। কারণ, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো ব্যবসা পরিচালনা বা মানি ম্যানেজমেন্ট শেখানো হয় না। তবে মনে রাখতে হবে—ব্যবসা মানেই সমস্যার সমাধান। যতক্ষণ সমস্যা থাকবে, ততক্ষণই ইনকাম থাকবে।
যেসব রিস্ক ব্যবসাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়
১. আইনবিরোধী চুক্তি বা ব্যবসা
অবৈধ দলিল বা জাল চুক্তিতে জড়ালে তা শুধু আইনি ঝুঁকি নয়, পুরো ব্যবসার পতন ঘটাতে পারে। তাই বিনিয়োগের আগে প্রতিটি নথিপত্র বৈধ কিনা তা যাচাই করে নিন।
২. অতিরিক্ত ঋণ নির্ভরতা
সম্পদের সমান ঋণ মানে ব্যবসা “শূন্য অবস্থায়” আছে। অপ্রয়োজনে ঋণ নিলে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ঋণ নিন হিসাব করে, লাভের নিশ্চয়তা না থাকলে নয়।
৩. অনিশ্চিত আয়ের ওপর বিনিয়োগ
বিক্রির প্রকৃত রেকর্ড ছাড়া ইনভেস্টমেন্ট নেওয়া ভয়ংকর ঝুঁকি। অনেক উদ্যোক্তা কৃত্রিম বিক্রির হিসাব দেখিয়ে অর্থ তোলেন, যা পরবর্তীতে পুরো ব্যবসাকে বিপদে ফেলে।
আরো পড়ুন: শুরু হলো ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন
৪. একক ক্লায়েন্ট বা প্রোডাক্টের ওপর নির্ভরতা
শুধু একজন ক্রেতা বা একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা ব্যবসার সবচেয়ে বড় ভুল। এক ক্লায়েন্ট হারালেই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই বিকল্প প্রোডাক্ট ও ক্লায়েন্ট তৈরি করুন।
৫. বাজার বিশ্লেষণ ছাড়া ইনভেস্টমেন্ট
শুধু “আইডিয়া ভালো” শুনে বিনিয়োগ নয়। বাজারে চাহিদা, প্রতিযোগিতা ও পণ্যের স্থায়িত্ব যাচাই না করলে ক্ষতির মুখ দেখা সময়ের ব্যাপার।
৬. ক্যাশ ফ্লো অবহেলা
টাকা আসছে-যাচ্ছে, কিন্তু কোথায় আটকে যাচ্ছে আপনি জানেন না—এটাই ব্যবসা ধ্বংসের অন্যতম কারণ। প্রতিদিন লেনদেন পর্যবেক্ষণ করুন এবং অর্থের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৭. পার্টনার বাছাইয়ে ভুল
ভুল পার্টনার মানেই ভবিষ্যতের ঝামেলা। পার্টনারের পূর্ব ইতিহাস যাচাই করুন এবং সব চুক্তি লিখিতভাবে সম্পন্ন করুন—মুখের কথা নয়, কাগজে কলমে হোক সবকিছু।
৮. প্রযুক্তির সঙ্গে তাল না মেলানো
আজকের বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। পুরনো পদ্ধতিতে ব্যবসা চালালে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং, অটোমেশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুন।
৯. এক প্ল্যাটফর্মে অন্ধ ভরসা
শুধু ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম নির্ভর ব্যবসা করা বিপজ্জনক। নীতিমালা পরিবর্তন বা প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসা থেমে যেতে পারে। তাই নিজের ওয়েবসাইট বা বিকল্প মাধ্যম তৈরি রাখুন।
১০. সব টাকা এক জায়গায় বিনিয়োগ
অফিস সাজানো বা প্রোডাক্ট সোর্সিংয়ে পুরো বাজেট ঢেলে ফেললে অন্য খাতে ঘাটতি দেখা দেয়। তাই বাজেট ভাগ করুন—প্রোডাক্ট, মার্কেটিং ও অপারেশন—সব কিছুর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখুন।
১১. অতিরিক্ত স্টক রাখা
চাহিদা না বুঝে বেশি স্টক রাখলে বিক্রি না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়। তাই বাজার বিশ্লেষণ করে সীমিত পরিমাণে পণ্য সংগ্রহ করুন।
১২️. রিপিট কাস্টমার না তৈরি করা
শুধু নতুন কাস্টমার আনার দিকে নজর না দিয়ে পুরনো ক্রেতাদের ধরে রাখুন। কারণ নতুন ক্রেতা আনতে যত খরচ হয়, পুরনো একজনকে ধরে রাখতে লাগে তার অর্ধেক।
ব্যবসায় সফল হতে চাইলে এই ১২টি রিস্ক এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে ব্যবসা হবে টেকসই, লাভজনক ও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল। উদ্যোক্তাদের মনে রাখার মতো কথা— “যতক্ষণ সমস্যা, ততক্ষণই ইনকাম।”
সমস্যার সমাধানই হলো সফল ব্যবসার প্রকৃত ভিত্তি।

