HomeEducationক্লাসের টপার হওয়া ভালো নাকি মেধাবী

ক্লাসের টপার হওয়া ভালো নাকি মেধাবী

ক্লাসের টপার হওয়া ভালো নাকি মেধাবী

তোকে কিন্তু এবার ক্লাসে ফার্স্ট রাঙ্ক করতেই হবে এই ডায়লগ টা আমরা মোটামুটি সবাই আমাদের মা-বাবাদের মুখ থেকে শুনে থাকি। একদম ছোটবেলা থেকেই আমাদের মনের মধ্যে অন্যের থেকে ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ছোটবেলা থেকেই আমাদের এই মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়।

যে পড়াশোনায় ভালো হওয়া মানে হলো আমার ক্লাসের সব বন্ধুদের থেকে বেশি নাম্বার পাওয়া। এবার ক্লাসে সবাই যদি একশতে ২০ নাম্বার পায় আর আমি ২১ নাম্বার পেয়ে ফার্স্ট পেয়ে যাই তাহলেও আমি সফল। আমার ক্লাসে সবাই যদি একশতে ৯৮ করে নাম্বার পায় আর আমি ৯৭ নাম্বার পাই এবং যে টপার সে ৯৯ পায় তাহলে তখন আমি ব্যর্থ। কারণ যেহেতু আমি ১০০/ ৯৭ পেয়েও ক্লাসে লাস্ট রাঙ্ক করেছি তাই আমি ব্যর্থ।

তার মানে আসলে আমি কতটা কি শিখলাম? নতুন কি কি জানলাম? কতটা আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়লো বা কতখানি আমার চিন্তা ভাবনার বিকাশ হল এসবের কোন মূল্য নেই। আমি কত নাম্বার পেলাম এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি সেটা অন্য সবার থেকে বেশি না কম শুধমাত্র সেটারই মূল্য আছে। এর ফলে কি হয় পরিক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর ক্লাসের যে বাচ্চাগুলো কম নাম্বার পায় তারা একটা কোনায় বসে কাঁদতে শুরু করে।

আর যে বাচ্চারা সবথেকে বেশি নাম্বার পায় সে ওরই বন্ধুদের কোণায় বসে কাঁদতে দেখে নিজে আনন্দ করতে শিখে যায়। যখন একটা বাচ্চা তার কোনো প্রিয় বন্ধুর দুঃখে দুঃখ পাওয়ার বদলে সেটাকে নিজের সফলতা বলে ভাবা শিখতে শুরু করে তখন সেটা সফলতা না।

সেই বাচ্চাটার মনের মধ্যে নিচু মানসিকতা বা হিনোমন্নতা তৈরি হতে শুরু হওয়ার লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। তার মানে কি প্রতিযোগিতা খারাপ। প্রতিযোগিতা তখনই খারাপ যখন আমরা অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লেগে পড়ি। কারণ তখন অনোর বার্থতা কারণ তামাদের সফলতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য এটা না যে একটা বাচ্চাকে অন্য একটা বাচ্চার থেকে ভালো করে তোলা।

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রতিটা বাচ্চা যাতে তার নিজে সর্বোচ্চ প্রতিভার আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারে। অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় একটা বাচ্চার কতখানি প্রতিবার আত্মপ্রকাশ হবে সেটা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যায়। সে কাদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে তার উপর যখন সেই বাচ্চাটা সর্বোচ্চ লক্ষ্য শুধুমাত্র অন্য কারোর থেকে জাস্ট ১ কদম এগিয়ে থাকা হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই পরিস্থিতিতে কখনোই সেই বাচ্চাটার সর্বোচ্চ প্রতিভার আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে না।

কারণ প্রতিটা বাচ্চাই আলাদা কেউ হয়তো একটা অংক একবার করেই শিখে যায়। কেউ হয়তো সেই অংকটায় দশবার করার পর শিখে, কিন্তু আলটিমেটলি দুজনেই সেটা চাইলেই শিখতে পারে আর এই শিখতে চাওয়াটাই জীবনের প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রতিযোগিতা না বরং প্রতিটা বাচ্চার মধ্যে প্রচেষ্টা গড়ে তোলায় শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। যাতে সেই বাচ্চাটার মধ্যে নতুন কিছু শেখার নতুন কিছু জানতে পারার যে স্বাভাবিক আনন্দ সেটা বারবার উপভোগ করতে চাওয়ার খিদে তৈরি হয়। যাতে পড়াশোনা করাটা তার কাছে কোন দুঃখের উৎস না বরংআনন্দের উৎস হয়ে ওঠে।

কিন্তু তার জন্য প্রতিটা বাচ্চার মনের ভেতর থেকে প্রতিযোগিতার মনোভাবকে দূরে সরিয়ে প্রচেষ্টার মনোভাবকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। এবার অনেকে হয়তো স্কুল, কলেজ আর শিক্ষা ব্যবস্থাকে এর জন্য দোষ দিতে শুরু করবে। কিন্তু আমাদের এটা বুঝতে হবে যে স্কুল কলেজ গুলো আমরা যেটা চাই শুধুমাত্র সেই অনুযায়ী কাজ করছে।কারন আমাদের দেওয়া টাকাতেই ওরা চলছে তাই আমরা যেরকম চাইছি ওরা সেরকমটারই ব্যবস্থা করছে। প্রতিটা বাবা মা নিজের নিজের বাচ্চাকে ক্লাসে ফার্স্ট করতে দেখতে চায়। স্কুল কলেজ গুলো তাই সেটাই চেষ্টা করছে যদি প্রতিটা বাচ্চা এবং তাদের বাবা মা এই সত্যিটা বুঝে যায় যে অন্যের থেকে বেশি নাম্বার পেয়ে সেলিব্রেট করাটা সফলতা না বরং চনমালাতার লক্ষণ সফলতা না বরং হনুমান্যতার লক্ষণ।

তাহলে তারা তখন নাম্বারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ভুলটা করা বন্ধ করবে আর যখন নাম্বার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ থাকবে না তখনই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য গুলো পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে শুরু করবে। এবার অনেক বাবা মা এমনকি হয়তো ছেলেমেয়েরাও বলবে কম নাম্বার পেলে চাকরিটা দেবে কে? ভবিষ্যতে পেটটা চলবে কি করে?

তাহলে আমি তাদের বলব যে তাহলে শিক্ষাটা কে তারা ব্যবহার করতে চাইছে নিজেকে একটা রোবট তৈরি করতে চাওয়ার জন্য প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারার জন্য না। কারণ যদি শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পুরণ হতে দেওয়া হয় একটা বাচ্চার সর্বোচ্চ মানসিক বিকাশ ঘটতে দেওয়া হয় তাহলে সেই বাচ্চাটা আর যাই হোক ভবিষ্যতে পেট চলবে কি করে সেটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ থাকবে না।

হ্যাঁ হয়তো তাদের গলায় পোষা কুকুরের গলায় বেঁধে দেওয়া ফেরতিটার মতো অফিস থেকে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া অফিস আইডি কার্ডটা ঝুলবে না। কিন্তু তারা নিজের প্রতিভার বলে এমন কিছু করবে যেটা নিচ মানসিকতা সম্পন্ন সিংহ মান্যতার শিকারগ্রস্ত মানুষ রুপি রোবটদের পক্ষে করতে পারা কোনদিনও সম্ভব হবে না।

আর এই কথাগুলো যে আমি হাওয়ায় বলছি না সেটার প্রমাণ আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তিদের তালিকাটা নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখলেই বুঝতে পারব। কারণ সেই তালিকায় একজনও এরকম আছেন কিনা বলে সন্দেহ আছে যিনি কিনা ক্লাসের টপার হতেন।

কিন্তু তাদের সবার মধ্যে আমরা যে কোয়ালিটিটা কমন পাই সেটা হল প্রচেষ্টার মনোভাব। তাই চলুন আমরা সবাই মিলে আমাদের মধ্যে থেকে প্রতিযোগিতার মনোভাবকে মুছে ফেলে প্রচেষ্টার মনোভাবকে গড়ে তুলি।

Star Shanto
Star Shantohttps://starshanto.com/
Shanto Ghose is the CEO and MD of Star Shanto. I have 7 years of Online Experience.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

10,916FansLike
2,458FollowersFollow
28,198SubscribersSubscribe
- Advertisment -

Recent Post Read