চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই ছয়বার দাম বেড়েছে। বর্তমানে একভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ফলে ক্রেতারা গয়না কেনার আগ্রহ হারাচ্ছেন, বিপাকে পড়ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।
একদিনে ভরিপ্রতি দাম বাড়ল তিন হাজারের বেশি
সর্বশেষ একদিনের ব্যবধানে ভরিপ্রতি ৩ হাজার ১৩৫ টাকা বেড়েছে স্বর্ণের দাম। ভ্যাট ও মজুরি যোগ হওয়ায় একভরি গয়না কিনতে এখন ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি। ব্যবসায়ীদের মতে, লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন গয়নার বিক্রি ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। আগে যেখানে দোকানগুলোতে নতুন গয়না বিক্রি ছিল মূল আয়ের প্রধান উৎস, এখন পুরোনো গয়না বিক্রিই বেশি হচ্ছে।
ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের হতাশা
ঢাকার মানিকনগরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য ৫ লাখ টাকার বাজেট করেছিলেন। কিন্তু স্বর্ণের দামের উর্ধ্বগতির কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, স্বর্ণের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক কারিগর বেকার হয়ে পড়ছেন।
কেন বাড়ছে স্বর্ণের দাম
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ মজুত বৃদ্ধি— এসব কারণে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েই চলেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে বাংলাদেশের বাজারেও। ফলে স্বর্ণ কেবল গয়না নয়, বরং নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
আরো পড়ুন: আজকের সোনার দাম – ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সামনে কী অপেক্ষা করছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম দুই লাখ টাকা অতিক্রম করতে পারে। বিশ্ববাজারেও স্বর্ণ নতুন রেকর্ড গড়ছে। এ সপ্তাহে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৬৪৭ ডলার ছাড়িয়েছে। অনুকূল পরিস্থিতি থাকলে ভবিষ্যতে ৫ হাজার ডলার স্পর্শ করাও অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে একভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল মাত্র ৬,৯০০ টাকা। দুই দশকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকায়। এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণ এখনও নিরাপদ আশ্রয়, যদিও সাধারণ ক্রেতাদের কাছে তা আর সাশ্রয়ী নয়।