বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চের আগে সাধারণত কোনো দলই নেতৃত্বে বড় পরিবর্তনে যেতে চায় না। কারণ অধিনায়ক বদল মানেই নতুন কৌশল নতুন মানসিকতা এবং ড্রেসিংরুমে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।
কিন্তু সেই চিরচেনা পথ থেকে সরে এসে বিশ্বকাপের মাত্র দুই মাস আগে অধিনায়ক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এটি কি ঝুঁকিপূর্ণ এক বাজি নাকি ভবিষ্যতের জন্য সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ ।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনো ইনজুরি সমস্যা, কখনো ধারাবাহিকতার অভাব আবার কখনো অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের ভারসাম্য না পাওয়ায় দলকে ভুগতে হয়েছে।
সর্বশেষ সিরিজগুলোতে প্রত্যাশিত ফল না আসায় নির্বাচক ও বোর্ডের ওপর চাপ বাড়ছিল। এরই মধ্যে অধিনায়কত্বে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা অনেকের চোখে ছিল অনিবার্য।
বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দলকে নতুন দিশা দিতেই এই পরিবর্তন। আগের অধিনায়কের অভিজ্ঞতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ইনজুরি ও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন অধিনায়কের কাঁধে তাই এখন দ্বিগুণ দায়িত্ব একদিকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা অন্যদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বকাপের আগে অধিনায়ক বদল দুই ধরনের ফল বয়ে আনতে পারে। ইতিবাচক দিক হলো নতুন অধিনায়ক অনেক সময় দলকে নতুন উদ্দীপনা দিতে পারেন। খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয় নতুন প্রতিযোগিতা ও দায়িত্ববোধ। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ে তারা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পায়। শ্রীলঙ্কার মতো একটি দল যেখানে প্রতিভার অভাব নেই সেখানে এই পরিবর্তন হঠাৎ করেই ভালো ফল আনতে পারে।
অন্যদিকে ঝুঁকির জায়গাটাও কম নয়। অধিনায়কত্ব শুধু মাঠের সিদ্ধান্ত নয়। এটি ড্রেসিংরুমের নিয়ন্ত্রণ চাপ সামলানো এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। বিশ্বকাপের মতো আসরে যেখানে প্রতিটি ম্যাচই প্রায় নকআউটের মতো সেখানে নতুন অধিনায়কের অভিজ্ঞতার অভাব বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। সময়ও খুব কম দই মাসে পুরো দলের কৌশল বদলে ফেলা সহজ নয়।
তবে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ইতিহাস বলছে । তারা সংকটের মধ্যেই অনেক সময় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জয় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক এশিয়া কাপে সাফল্য এই দলটি বারবার প্রমাণ করেছে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তারা চমক দিতে পারে। বর্তমান পরিবর্তনও তেমনই এক চমকের প্রস্তুতি কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরো পড়ুন : গোল করলেন সাকিব ম্যাচসেরা আরেক সাকিব দুই নায়কেই নিয়ে জমজমাট ম্যাচ
সব মিলিয়ে বলা যায় বিশ্বকাপের দুই মাস আগে অধিনায়ক বদল শ্রীলঙ্কার জন্য এক বড় ঝুঁকি হলেও এটি তাদের নতুন সম্ভাবনার দরজাও খুলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন একটাই এই পরিবর্তন কি দলকে আরও শক্তিশালী করবে নাকি বাড়াবে অনিশ্চয়তা? উত্তর মিলবে বিশ্বকাপের মাঠেই যেখানে শ্রীলঙ্কা আবারও প্রমাণ করতে চাইবে, তারা কখনোই হাল ছেড়ে দেওয়ার দল নয়।

