আজ সন্ধ্যায় ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় আবার অনুভূত হলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। হঠাৎ দুলে ওঠা ভবন, জানালার কেঁপে ওঠা শব্দ এবং মুহূর্তের মধ্যে মানুষের আতঙ্ক সব মিলিয়ে কয়েক সেকেন্ডের এই কাঁপন রাজধানীবাসীর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী অঞ্চল, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে ছোট-বড় কয়েকটি ভূমিকম্পের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা গেছে।
ঢাকায় বসবাসকারীদের কাছে ভূমিকম্প এখন আর অচেনা কিছু নয়। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি হওয়ায় প্রায়ই মৃদু বা মাঝারি মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। আজকের ভূমিকম্পও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন যে তারা প্রথমে বুঝতেই পারেননি এটি ভূমিকম্প, কারণ কেঁপে ওঠা ছিল খুবই স্বল্প সময়ের। তবে উচ্চ ভবনে থাকা মানুষদের কাছে বিষয়টি বেশ স্পষ্ট ছিল। অনেক অফিসে কর্মীরা দৌড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন, একই দৃশ্য দেখা গেছে বিভিন্ন শপিংমল, কলোনি ও আবাসিক ভবনেও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নরসিংদী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ এলাকা বাংলাদেশের সক্রিয় ফল্ট লাইনের কাছাকাছি বলে এখানে মাঝেমধ্যে ভূকম্পন হওয়া স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার, তা হলো ঢাকার অধিকাংশ ভবনই এখনো শক্তিশালী ভূমিকম্প সহনশীল কাঠামোতে নির্মিত নয়। পুরনো ভবন, সংকীর্ণ রাস্তা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
আজকের ভূমিকম্পের পর মানুষ যে আতঙ্কে দৌড়ে বের হয়ে এসেছে, তা থেকেই বোঝা যায় প্রস্তুতির জায়গায় এখনও বড় ঘাটতি রয়েছে। অনেকেই জানেন না ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত, কোথায় আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ, বা অল্প সময়ে কীভাবে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখা যায়। স্কুল, অফিস, মার্কেট কোথাও নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া নেই, নেই প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
আরো পড়ুৃন : চট্রগ্রামে বান্দরের দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেয়ার প্রতিবাদে শ্রমিক
ঢাকা এমন একটি শহর যেখানে লাখো মানুষ প্রতিদিন একই ছাদের নিচে কাজ করে বা ঘুমায়। তাই ভূমিকম্পকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না। ফলে এখনই ভবনের দুর্বলতা চিহ্নিত করা, জরুরি বহির্গমন পথ তৈরি করা, অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সক্ষমতা বাড়ানো, এবং সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
আজকের ভূমিকম্প আবার আমাদের মনে করিয়ে দিল প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই নয়, বরং প্রস্তুতিই পারে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা এবং পরিকল্পনাই হতে পারে আমাদের প্রধান অস্ত্র।
সবাই নিরাপদ থাকুন সতর্ক থাকুন।

