বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আবারও আসছে বিশাল এক উৎসব ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই আসর আয়োজন করতে যাচ্ছে দুই প্রতিবেশী ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ও রোমাঞ্চকর এই সংস্করণ এবার অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশের মোট ৮টি মনোমুগ্ধকর ভেন্যুতে। ইতিমধ্যেই আইসিসি (ICC) আনুষ্ঠানিকভাবে ভেন্যু তালিকা ঘোষণা করেছে, যা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।
এই প্রথমবারের মতো ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে কোনো টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। এর আগে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপও ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে হয়েছিল। দীর্ঘ এক যুগ পর ফের দক্ষিণ এশিয়ায় ফিরছে ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলোর একটি।
আইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে
দুই দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো, দর্শকসংখ্যা ও আবহাওয়া বিবেচনায় ভারত ও শ্রীলঙ্কা এই আয়োজনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যৌথ আয়োজন শুধু ক্রিকেট নয়, বরং দুই দেশের পর্যটন ও অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আইসিসি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে নিম্নলিখিত ৮টি স্টেডিয়ামে
- মুম্বাই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম
ঐতিহাসিক এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেমিফাইনাল। - কলকাতা ইডেন গার্ডেন্স
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ স্টেডিয়াম। এখানে থাকবে বড় গ্রুপ ম্যাচগুলো। - চেন্নাই এম.এ. চিদাম্বরম স্টেডিয়াম (চেপক)
স্পিন সহায়ক পিচে হবে রোমাঞ্চকর লো–স্কোরিং লড়াই। - আহমেদাবাদ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটিতেই অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল ম্যাচ। - দিল্লি অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম
– ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে দেখা যাবে বেশ কিছু হাই–ভোল্টেজ ম্যাচ।
- কলম্বো আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম
স্থানীয় দর্শকদের উন্মাদনায় মুখর থাকবে এই মাঠ। - গলে গলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম
সমুদ্রপাড়ের মনোরম এই মাঠে হবে কয়েকটি গ্রুপ ম্যাচ। - পল্লেকেলে পল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম (ক্যান্ডি)
সম্ভাবনা রয়েছে, এখানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচ।
আইসিসির প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী,
২০২৬ সালের অক্টোবর–নভেম্বর মাসে এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।
টুর্নামেন্ট চলবে প্রায় ২৫ দিনব্যাপী, যেখানে থাকবে
✅ ২০টি দল
✅ মোট ৫৫টি ম্যাচ
✅ এবং ২টি সেমিফাইনাল ও ১টি ফাইনাল
গ্রুপ স্টেজের পর সুপার ৮ রাউন্ড ও নক–আউট পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মাঠে।
২০ দলের নতুন ফরম্যাটে রোমাঞ্চ আরও বেড়ে যাবে
২০২৪ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো আইসিসি ২০ দলের ফরম্যাট চালু করে। সেটিই অব্যাহত থাকবে ২০২৬–এও।
এই ২০ দল ভাগ হবে ৪টি গ্রুপে, প্রতিটি গ্রুপে থাকবে ৫টি করে দল।
প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল যাবে সুপার ৮–এ, সেখান থেকে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল নির্ধারিত হবে।
আইসিসি জানিয়েছে, আগের চেয়ে আরও বেশি দেশকে সুযোগ দেওয়াই এই নতুন কাঠামোর মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
টাইগাররা গত দুই আসরে ভালো পারফর্ম না করলেও, এবারে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া ও মাঠের পরিবেশ তাদের জন্য অনুকূল হবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের প্রধান কোচও ইতিমধ্যে বলেছেন,ভারত–শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন আমাদের ঘরের মতো। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
সম্ভাব্য ফেভারিট দলগুলো
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেসব দল ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে
ভারত: নিজ মাঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নে মরিয়া।
অস্ট্রেলিয়া: বড় মঞ্চে সবসময়ই ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ।
ইংল্যান্ড: আধুনিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের পথপ্রদর্শক।
পাকিস্তান: শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ তাদের মূল অস্ত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০২৪–এর ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
ক্রিকেট বিশ্লেষক হরভজন সিং বলেছেন,
এই আয়োজন শুধু ভারত বা শ্রীলঙ্কার জন্য নয়, গোটা এশিয়ার ক্রিকেটের জন্য একটি বড় সুযোগ।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক সাঙ্গাকারার মতে,
যৌথ আয়োজন মানে অভিজ্ঞতা বিনিময়, এবং ক্রিকেটের বন্ধন আরও মজবুত হবে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই টুর্নামেন্ট থেকে দুই দেশ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হতে পারে।
স্পনসরশিপ, পর্যটন, টিকিট বিক্রি ও সম্প্রচারস্বত্ব মিলিয়ে এই আয় দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়বে।
আরো পড়ুন :হ্যারি কেইনের গোল উদযাপন – শততম গোলের ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
ভারত ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই ঘোষণা করেছে,
বিশ্বকাপ চলাকালে বিদেশি দর্শকদের জন্য স্পেশাল ট্যুর ভিসা, হোটেল ছাড় ও সিটি–ট্রান্সপোর্ট সুবিধা দেওয়া হবে।
বিশেষ করে কলম্বো, মুম্বাই ও দিল্লিতে থাকবে ইংরেজি ভাষাভিত্তিক গাইড সেবা।
ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে, যেখানে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার দর্শক একসাথে বসে ম্যাচ দেখতে পারবেন
যা ক্রিকেট ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব রেকর্ড।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বলিউডের জনপ্রিয় তারকাদের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও থাকবে।
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুধু একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়,
এটি হবে দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য, ক্রীড়া উন্মাদনা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এক উৎসব।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার এই যৌথ আয়োজনে ক্রিকেট ফিরে পাবে তার শিকড়ে দক্ষিণ এশিয়ার হৃদয়ে

