নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাস্তায় অবরোধ ও বিক্ষোভ বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ। সংস্থাটি মনে করছে, ধারাবাহিক অবরোধের কারণে জনদুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মতামত দেওয়া হয় বিভিন্ন দাবিদাওয়া যাতে নির্বাচনের পরবর্তী সরকার গঠনের পর উপস্থাপন করা হয়, সে বিষয়ে নাগরিকদের আহ্বান জানানো দরকার। বিষয়টি সোমবার ও মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
বৈঠকে কী আলোচনা হলো
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রস্তাব আসে—প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ জানানো হবে, তিনি যেন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা যৌক্তিক দাবি থাকলেও নির্বাচনের আগে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকেন।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাব অনুযায়ী বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠি আকারে পাঠানো হতে পারে, অথবা সরাসরি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও জানানো হতে পারে।
অবরোধে রাজধানীতে দুর্ভোগ
রোববার সচিবালয়ে বৈঠক চলাকালেই প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সড়ক অবরোধে রাজধানীর পল্টন–মতিঝিল এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে।
গতকালও আন্দোলন করেছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁরা তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার চেষ্টা করেন, তবে পুলিশ তাঁদের হাইকোর্টের সামনে আটকে দেয়।
অন্যদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়ে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে; পরে কলেজ অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস হোসেন এসে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন।
পুলিশের বক্তব্য
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরও বিভিন্ন গোষ্ঠীর আন্দোলন থামেনি এই বিষয়টি নিয়েই বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন একাধিক বাহিনীর প্রধান।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার কোথাও না কোথাও সড়ক অবরোধ হয়। এতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রাখতে হচ্ছে। এতে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই এখন মনোযোগ দিতে নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে।
প্রেক্ষাপট
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানীর রাস্তায় আন্দোলন চলছে। যমুনা ভবনের সামনে একাধিক বিক্ষোভের পর ডিএমপি ওই এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। অনুরোধ করছি, আমাদের কাজ করতে দিন।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় ডিজিটাল রূপান্তরের নতুন পদক্ষেপ-অনলাইন জামিননামা
কিন্তু বাসসের হিসাব অনুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে ১,৬০৪টি সড়ক অবরোধ হয়েছে; ১২৩টি সংগঠন এসব অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।
সারসংক্ষেপ:
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন জনদুর্ভোগ ঠেকাতে সড়ক অবরোধের মতো আন্দোলন ঠেকাতে চাইছে, যাতে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।