Thursday, October 16, 2025
Homeমরা ভালো করব”— মিরাজের প্রতিশ্রুতি কি সুনীলের কবিতার মতো অপূর্ণ রয়ে গেল?

মরা ভালো করব”— মিরাজের প্রতিশ্রুতি কি সুনীলের কবিতার মতো অপূর্ণ রয়ে গেল?

কিছু প্রতিশ্রুতি থাকে, যা শোনার সময় মন ভরে যায়,
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পায় ন ঠিক যেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি কবিতার মতো।
বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের কথাগুলোও
এখন অনেকটাই সেই কবিতার পঙ্‌ক্তির মতো শোনায়।
আশার কথা আছে, কিন্তু নেই তার প্রতিধ্বনি মাঠের পারফরম্যান্সে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে মনে হলো
বাংলাদেশ দলের গান শুরু হয় ভালো আভোগে, কিন্তু হারিয়ে যায় অন্তরায়,
শেষ পর্যন্ত স্থায়ীতেও আসে না কোনো সুরেলা সমাপ্তি।

ক্রিকেট আর সংগীত: এক সুরে বাঁধা দুই জগৎ

শাস্ত্রীয় সংগীতের ওস্তাদ রশিদ খান একবার বলেছিলেন,

ক্রিকেটটা সংগীতের মতোই। একেকটা কাভার ড্রাইভ, পুল, হুক
সবই একেকটা রাগের মতো সুরেলা প্রবাহ।

তাঁর মতে, একটা ভালো গানের মতোই ক্রিকেটেও থাকে তিন ভাগ
আভোগ, অন্তরা, আর স্থায়ী।
শুরুর সুরটা যদি ভালো হয়, শ্রোতা টানবে;
মাঝের অংশে তাল না পেলে মন ভাঙবে,
আর শেষটা সুন্দর না হলে কেউই মনে রাখবে না সেই গান।

রশিদ খানের এই দর্শনটাই আজ যেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভালো শুরু হয় না, মাঝপথে হারিয়ে যায় তাল,
আর শেষে থেকে যায় অফটিউন এক স্থায়ী।

সিরিজের আভোগ: হারের সুরে শুরু

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই বোঝা গিয়েছিল,
বাংলাদেশের সুর মেলেনি।
১৮ রানে প্রথম উইকেট, ২৫ রানে দ্বিতীয়
এরপরও আশা ছিল, মাঝের ওভারগুলোয় অন্তরা জমে উঠবে।
কিন্তু ২২১ রানে অলআউট হয়ে ৫ উইকেটে হারের পর মিরাজ বলেছিলেন,

আমরা সব সময় প্রথম ১৫ ওভারে উইকেট হারাই…
আমি নিশ্চিত, পরের ম্যাচে ছেলেরা ভালো করবে।

সেই প্রতিশ্রুতিই ছিল যেন প্রথম ‘রিহার্সাল’
যার ফল মিলল না দ্বিতীয় ম্যাচেও

অন্তরায় হারিয়ে গেল তাল

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলাররা দারুণ শুরু করেছিলেন।
আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ১৯০ রানে।
কিন্তু ব্যাট হাতে একই পুরনো গল্প
একটা ভালো আভোগও নয়, মাঝপথে ভেঙে যাওয়া অন্তরার মতো পারফরম্যান্স।
১৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১০৯ রানে।
দলের পারফরম্যান্সে যেন ভেসে উঠল হতাশ শ্রোতাদের দীর্ঘশ্বাস।

স্থায়ী নেই, আছে শুধু প্রতিশ্রুতির প্রতিধ্বনি

শেষ ম্যাচে, সিরিজ ইতিমধ্যে হারিয়ে,
মিরাজ আবারও আশার সুর ছুঁড়লেন

আমাদের এখনো একটি ম্যাচ বাকি.
আমাদের ব্যাটিংয়ের উন্নতি করতে হবে।

কিন্তু ফলটা হলো উল্টো
বাংলাদেশ ইতিহাসে আফগানিস্তানের কাছে সবচেয়ে বড়,
২০০ রানের ব্যবধানে হারের রেকর্ড গড়ল।
সুনীলের কবিতার সেই বোষ্টমীর মতোই,
যিনি বলেছিলেন অন্তরাটা শোনাবেন শুক্লা দ্বাদশীর দিনে
কিন্তু আর আসেননি।

বাংলাদেশও মাঠে তিনবার ফিরেছে,
কিন্তু একবারও শোনাতে পারেনি সুন্দর অন্তরা বা স্থায়ী।

আরো পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে চোখের জল লুকাতে ব্যস্ত নিগার সুলতানা ও সতীর্থরা।

দেখিস, একদিন.এখনো অপূর্ণ

কবিতার শেষের সেই বিখ্যাত তিনটি বিন্দু
“দেখিস, একদিন, আমরাও…”
সেটা ছিল এক অপূর্ণ আশার প্রতীক।
আজ বাংলাদেশ দলের অবস্থাও ঠিক তাই।
প্রতিশ্রুতির সুর শোনা যায়, কিন্তু তা পূর্ণ হয় না মাঠে।
হয়তো আমরাও অপেক্ষায় থাকব,
যেদিন মিরাজরা সত্যিই একটি নিখুঁত আভোগ,
জুতসই অন্তরা আর দারুণ এক স্থায়ী মিলিয়ে
একটা সম্পূর্ণ গান উপহার দেবেন
যেখানে থাকবে না কোনো চিহ্ন, থাকবে কেবল বিজয়ের পূর্ণতা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ