Sunday, October 12, 2025
Homeহেফাজতে ১৫ সেনা কর্মকর্তা, আত্মগোপনে সাবেক সামরিক সচিব কবীর আহাম্মদ

হেফাজতে ১৫ সেনা কর্মকর্তা, আত্মগোপনে সাবেক সামরিক সচিব কবীর আহাম্মদ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর সেনাবাহিনী জানিয়েছে—১৫ জন চাকরিরত কর্মকর্তা হেফাজতে আছেন এবং একজন আত্মগোপনে। একই বিষয়ে বিএনপি বলেছে, সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব রক্ষায় ‘নির্মোহ ও স্বচ্ছ বিচার’ অপরিহার্য।

সেনা হেফাজতে ১৫ কর্মকর্তা, আত্মগোপনে একজন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। সেনাবাহিনী জানায়, বর্তমানে ১৫ জন কর্মকর্তা চাকরিরত অবস্থায় সেনা হেফাজতে আছেন, একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর), আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ আত্মগোপনে রয়েছেন।

শনিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা হাতে না পেলেও সেনা সদর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। ৮ অক্টোবরই ১৬ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়, এবং পরদিন ১৫ জন সেই নির্দেশ পালন করেন।

কবীর আহাম্মদের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে

সেনা সদর জানায়, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে ৯ অক্টোবর বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। তাঁর অবস্থান অজানা থাকায় সেনাবাহিনী তাঁকে ‘ইলিগ্যাল এবসেন্ট’ ঘোষণা করেছে এবং খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাঁর যেন অবৈধভাবে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন: আগামীকালের আবহাওয়া ১৩ অক্টোবর ২০২৫

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, “সেনাবাহিনী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিচারের পক্ষে। আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি—‘নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ।’ আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।”

‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ সেনাবাহিনী

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, সংবিধান স্বীকৃত সব আইনের প্রতি সেনাবাহিনী শ্রদ্ধাশীল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও সেনা আইন পরস্পরের বিপরীতে নয়। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের পর কর্মকর্তাদের চাকরির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নে তিনি জানান, সংশোধিত আইনের ব্যাখ্যা এখনো প্রকাশ হয়নি; তাই সঠিক প্রয়োগবিধি জানতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে।

বিএনপির আহ্বান: নির্মোহ বিচার নিশ্চিত হোক

শনিবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলটি জানায়, সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব রক্ষায় নিরপেক্ষ বিচার প্রয়োজন। বিবৃতিতে বলা হয়, “সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এই দেশের গর্বিত সন্তান। সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক—এটাই অধিকাংশ সেনা সদস্যের প্রত্যাশা।”

বিএনপি আরও জানায়, “কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির দায় কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর চাপানো উচিত নয়। একইভাবে তাদের অপকর্মের কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও অনুচিত।”

দলটির বক্তব্যে জোর দিয়ে বলা হয়, ন্যায়বিচার শুধু অতীতের শাস্তি নয়, ভবিষ্যতের অন্যায় রোধেরও নিশ্চয়তা। “আইন ও মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধাই হতে পারে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি।”

জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব থাকবে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বড়। তিনি বলেন, “অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো হতে পারে।”

সেনাবাহিনী বলেছে, অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনাগুলো ঘটেছিল যখন কর্মকর্তারা র‍্যাব বা ডিজিএফআইয়ের মতো সংস্থায় প্রেষণে ছিলেন; তাই এসব কার্যক্রম সেনা কমান্ড কাঠামোর বাইরে ছিল। তদন্ত কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সেনাবাহিনী শুরু থেকেই সহযোগিতা করছে এবং প্রয়োজনীয় সব নথি সরবরাহ করেছে।

Ratan Datta
Ratan Datta
আমি রতন দত্ত "স্টার শান্ত" ওয়েবসাইটে ম্যানেজিং ও এডিটর হিসেবে নিয়োজিত রয়েছি। আমি খেলাধুলা, অটোমোবাইল, বিনোদন ও বিভিন্ন বিষয় লেখালেখি করি এবং আমার লক্ষ্য আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সহজে বোঝানো।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ