ঢাকায় নেমে এসেছে যেন ছোট্ট এক বিশ্ব একাদশ! কেউ ব্রাজিল থেকে, কেউ ফ্রান্স, কেউ আবার ক্যামেরুন থেকে এভাবে বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবলারদের নিয়ে গড়া হংকং জাতীয় ফুটবল দল এখন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মিশনে বাংলাদেশে।
২৫ সদস্যের দলে আছেন ১১ জন ফুটবলার, যাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা হংকংয়ে নয়। ফিফার নাগরিকত্ব ও যোগ্যতা নীতির সুযোগ নিয়ে তাঁরা এখন হংকংয়ের নাগরিক হয়ে খেলছেন এশিয়ার এই দলটির হয়ে।
ব্রাজিল, ফ্রান্স, ক্যামেরুন বহুজাতিক হংকং স্কোয়াড
এদের মধ্যে পাঁচজনই ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত-ডিফেন্ডার লুইস এদুয়ার্দো, মিডফিল্ডার ফার্নান্দো পেদ্রেইরা, ফরোয়ার্ড এভারটন কামারগো, জুনিনিয়ো ও স্টেফান পেরেইরা।
আরও আছেন ইউক্রেনীয় গোলরক্ষক ওলেক্সি শ্লিয়াকোটিন, স্কটিশ ডিফেন্ডার লিওন জোন্স, জাপানের শিনইচি চ্যান, ক্যামেরুনের মহামা আওয়াল, ফরাসি মিডফিল্ডার রাফায়েল মারকিস এবং স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড মানোলো ব্লেদা।
হংকং ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, এই দলটি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে আন্তর্জাতিক রঙে রঞ্জিত এক স্কোয়াড।
বাংলাদেশ-হংকং দ্বৈরথ
৯ অক্টোবর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও হংকং।
এরপর ১৪ অক্টোবর ফিরতি লেগে লাল-সবুজরা খেলবে হংকংয়ের মাটিতে।
দুই ম্যাচেই হংকংয়ের এই প্রবাসী তারকারা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন হামজা চৌধুরী ও জামাল ভূঁইয়াদের সামনে।
হংকংয়ের তারকা কামারগো: গোল ও সহায়তায় সমান দক্ষ
২০২৩ সালে হংকং জাতীয় দলে অভিষেক হয় ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত এভারটন কামারগোর। অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ১৯ ম্যাচে ১০ গোল ও ১৩ গোলে সহায়তা করেছেন এই উইঙ্গার।
৩৪ বছর বয়সী কামারগোর বিশেষত্ব হলো তাঁর ড্রিবলিং ও গতিময় আক্রমণ। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে বিভ্রান্ত করে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করার পাশাপাশি নিজেও তৈরি করেন আক্রমণের সুযোগ।
আওয়াল ও জুনিনিয়োর লক্ষ্য: বাংলাদেশকে হারানো
ক্যামেরুন বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার মহামা আওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশে খেলা সহজ নয়, তবে তাঁরা জয়ের জন্যই প্রস্তুত।
“শুনেছি, বাংলাদেশে পারফর্ম করা কঠিন। কিন্তু আমরা শক্তিশালী দল এবং ভালোভাবে প্রস্তুত। পূর্ণ শক্তি নিয়েই নামব, কারণ এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের জন্য পয়েন্ট খুব দরকার, বলেন আওয়াল, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
আরো পড়ুন :লা লিগার ম্যাচ বিদেশে আয়োজন নিয়ে বিভক্ত সমর্থকগোষ্ঠী
অন্যদিকে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার জুনিনিয়ো বলেন,
“হংকংয়ের হয়ে খেলা প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে দুবার হারাতে পারলে তা আমাদের জন্য বিশাল পদক্ষেপ হবে।”
বাংলাদেশ দলে প্রবাসীর ছোঁয়াও কম নয়
বাংলাদেশ জাতীয় দলেও এখন প্রবাসী ফুটবলারের উপস্থিতি দৃশ্যমান। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জায়ান আহমেদকে দলে নিয়েছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
প্রবাসী ফুটবলারদের যাত্রা শুরু হয়েছিল জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া এই মিডফিল্ডার ২০১৩ সালে অভিষেকের পর থেকেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরপর যুক্ত হয়েছেন তারিক কাজী, শাহ কাজেম, হামজা চৌধুরী, ফাহামিদুল ইসলাম ও শমিত সোম।
সামনে বড় পরীক্ষা
আসন্ন দুই লেগেই নির্ধারিত হতে পারে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ ভাগ্য। হংকংয়ের অভিজ্ঞ ও বহুজাতিক দলকে হারাতে হলে নিখুঁত রক্ষণ, ঠান্ডা মাথার কৌশল আর সর্বোচ্চ নিবেদনই হতে পারে জামাল–হামজাদের প্রধান ভরসা।