ওয়াশিংটন, ৬ অক্টোবর: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশজুড়ে বিক্ষোভ দমন ও অভিবাসন আইন প্রয়োগ জোরদারে ওরেগন, ক্যালিফোর্নিয়া ও ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটনেও একইভাবে গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নাগরিক-সামরিক বিভাজনের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত দিচ্ছেন অনেকে।
মার্কিন আইনে সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধতা
১৮৭৮ সালের ‘পসি কোমিটেটাস অ্যাক্ট’ (Posse Comitatus Act) অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এই আইনের মূল লক্ষ্য— নাগরিক জীবনে সামরিক হস্তক্ষেপ রোধ করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা।
তবে আইনে কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর ব্যবহারের নির্দিষ্ট সুযোগ রয়েছে।
ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের ব্যতিক্রম
ন্যাশনাল গার্ড মূলত রাজ্যভিত্তিক রিজার্ভ ফোর্স, যা সাধারণত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্যের গভর্নরের নির্দেশে সক্রিয় হয়। এই অবস্থায় পসি কোমিটেটাস আইন কার্যকর হয় না।
আরো পড়ুন: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুশীলনে আত্মবিশ্বাসী মারুফা আক্তার
তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে গার্ডকে ফেডারেলাইজ করে নিজের অধীনে আনতে পারেন— তখন আইনটি প্রযোজ্য হয়। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র কোডের টাইটেল ১০-এর সেকশন ১২৪০৬ অনুযায়ী এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট দেশব্যাপী “বিদ্রোহ দমন বা আইন প্রয়োগ” নিশ্চিত করতে রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পারেন।
আদালতের রায় ও বিতর্ক
৪ অক্টোবর ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহরে ২০০ গার্ড সদস্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র জেলা আদালতের বিচারক কারিন ইমারগাট। ট্রাম্পের দাবি ছিল— সহিংসতা ফেডারেল আইন প্রয়োগে বাধা দিচ্ছে, কিন্তু বিচারক বলেন, “এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগত।”
এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাস থেকে গার্ড পাঠানোর উদ্যোগও আদালত আটকে দেয়।
তবে এর বিপরীতে, ৯ম সার্কিট আপিল আদালত জুন মাসে রায় দিয়েছিল যে, লস অ্যাঞ্জেলেসে গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের আইনি ক্ষমতার মধ্যে পড়ে, কারণ তখন শহরে সহিংসতা বেড়ে গিয়েছিল।
৬ অক্টোবর ইলিনয় ও শিকাগো প্রশাসনও গার্ড মোতায়েন ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে; এ বিষয়ে এখনো রায় ঘোষণা হয়নি।
ইনসারেকশন অ্যাক্ট: ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ?
আইনগত বাধা অব্যাহত থাকলে ট্রাম্প ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ (Insurrection Act) প্রয়োগের কথাও বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন।
এই আইনটি পসি কোমিটেটাস অ্যাক্টের ব্যতিক্রম, যা বিদ্রোহ, সহিংসতা বা ‘অবৈধ বাধা’ সৃষ্টি হলে প্রেসিডেন্টকে নিজস্ব সিদ্ধান্তে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই আইনটি ৩০ বার প্রয়োগ করা হয়েছে— সর্বশেষ ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস দাঙ্গা দমনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ এটি ব্যবহার করেছিলেন।
ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে। আদালতের রায় এবং সম্ভাব্য আপিল প্রক্রিয়া এখন এই সিদ্ধান্তের বৈধতা ও প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।