মোবাইল ফোনের বাজারে শীর্ষ ১০ ব্র্যান্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের আগ্রহ তুঙ্গে। যোগাযোগ, অনলাইনভিত্তিক কাজ থেকে শুরু করে বিনোদন—প্রতিটি ক্ষেত্রকে নতুনভাবে বদলে দিচ্ছে মোবাইল। ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে হয়েছে ২৯ কোটি ৫২ লাখ ফোন, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা ব্র্যান্ডগুলো বাজারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, আর এর মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে শীর্ষ ১০ মোবাইল ব্র্যান্ডের তালিকা।
বৈশ্বিক মোবাইল ফোন বাজারের চিত্র
বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোনের বার্ষিক বাজারমূল্য এখন প্রায় ৫২ হাজার কোটি ডলার। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরবরাহ বেড়েছে ১ শতাংশ, আর বছরের শেষে মোট সরবরাহ ছাড়াতে পারে ১১৮ কোটি ফোন।
মোবাইল বাজারের সবচেয়ে বড় অংশীদার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (৪৯%), এরপর রয়েছে ইউরোপ (১৮%) ও উত্তর আমেরিকা (১৪%)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে স্মার্টফোনই সবচেয়ে বেশি চাহিদার পণ্য। সাশ্রয়ী দাম, উন্নত প্রযুক্তি, এআই নির্ভর ফিচার ও ক্যামেরার মান ভোক্তাদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চীনা কোম্পানিগুলো বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
মোবাইল ফোনের বাজারে শীর্ষ ১০ ব্র্যান্ড
১. স্যামসাং (দক্ষিণ কোরিয়া)

বিশ্বের এক নম্বর মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড হলো স্যামসাং। বাজারে শেয়ারের পরিমাণ প্রায় ১৯.৭%।
- ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি এখন ৮০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম চালায়।
- শুধু ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই ৫ কোটি ৮০ লাখ ফোন বাজারে এসেছে।
- পুরো বছরে সরবরাহ পৌঁছাতে পারে ৩০ কোটিতে, যা থেকে আয় হবে প্রায় ২১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার।
স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ ফোনের নকশা ও বৈশিষ্ট্য ভোক্তাদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। এর বিশ্বস্ত ব্যবহারকারীর একটি আলাদা শ্রেণি তৈরি হয়েছে।
২. অ্যাপল (যুক্তরাষ্ট্র)

অ্যাপল বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, শেয়ার ১৫.৭%।
- যাত্রা শুরু ১৯৭৬ সালে।
- অ্যাপলের বড় শক্তি হলো এর ইকোসিস্টেম—আইক্লাউড, ওয়াচ, ম্যাক ও আইফোনের পারস্পরিক সংযোগ।
- ভোক্তাদের কাছে নিরাপত্তা, ডেটা সুরক্ষা ও প্রিমিয়াম ডিজাইনের কারণে ব্র্যান্ডটি জনপ্রিয়।
- শুধু ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই ৪ কোটি ৬৪ লাখ ফোন বাজারে এসেছে।
বছর শেষে এ সংখ্যা ২২ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছাতে পারে, আর আয় ছাড়াতে পারে ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
আরো পড়ুন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘সাম্রাজ্য’: ওপেনএআইকে সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করলেন কারেন হাও
৩. শাওমি (চীন)

চীনা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে শাওমি।
- যাত্রা শুরু ২০১০ সালে।
- বৈশ্বিক বাজারে অবদান ১৪.৪%।
- সাশ্রয়ী দাম, দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ ও আকর্ষণীয় ডিজাইন শাওমির প্রধান শক্তি।
- ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজারে এসেছে ৪ কোটি ২৬ লাখ ফোন।
চলতি বছরে সরবরাহ ১৫ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছাতে পারে, আর আয় হবে প্রায় ৩৩৭৫ কোটি ডলার।
৪. ভিভো (চীন)

ভিভো বাজারে শেয়ার ৯.২%।
- ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত।
- উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তি ও স্টাইলিশ ডিজাইনের কারণে তরুণদের কাছে জনপ্রিয়।
- কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য ভিভোর ফোন অন্যতম পছন্দ।
- ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ কোটি ৭২ লাখ ফোন বাজারে এসেছে।
বছরের শেষে এ সংখ্যা ৬ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছাতে পারে।
৫. অপো (চীন)

অপো বৈশ্বিক বাজারে শেয়ার ৮.৫%।
- বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপে চাহিদা বেশি।
- ফ্যাশন সচেতনদের কাছে অপোর ফোন বেশ জনপ্রিয়।
- উন্নত মানের ক্যামেরা ও দ্রুত চার্জিং অপোর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজারে এসেছে ২ কোটি ৫১ লাখ ফোন।
বছর শেষে এ সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৫ কোটি ৫০ লাখ, আর আয় হবে ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।
৬. ওয়ানপ্লাস (চীন)

প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে ওয়ানপ্লাস ভিন্ন মাত্রার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
- প্রতিষ্ঠিত ২০১৩ সালে।
- বাজারে অবদান ৩%।
- মাঝারি দামে ফ্ল্যাগশিপ মানের সুবিধা দেয়।
- ২০২৪ সালে সরবরাহ হয়েছিল ৮০ লাখ ফোন, যা ২০২৫ সালে পৌঁছাতে পারে ১ কোটিতে।
৭. রিয়েলমি (চীন)

তরুণদের কাছে রিয়েলমি অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
- যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে।
- দামে সাশ্রয়ী এবং গেমিং-ফ্রেন্ডলি ফোন উৎপাদনই এর শক্তি।
- ২০২৪ সালে বাজারে এসেছে ১ কোটি ৪০ লাখ ফোন।
- ২০২৫ সালে এ সংখ্যা বাড়তে পারে ১ কোটি ৫০ লাখে, আর আয় ছাড়াতে পারে ২০০ কোটি ডলার।
৮. মটোরোলা (যুক্তরাষ্ট্র)

প্রাচীনতম ব্র্যান্ডগুলোর একটি মটোরোলা, প্রতিষ্ঠিত ১৯২৮ সালে।
- বৈশ্বিক বাজারে অবদান প্রায় ৪%।
- অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে ভাঁজযোগ্য নকশার ফোন দিয়ে আবারও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
- ২০২৪ সালে বাজারে এসেছে ১ কোটি ফোন, আর ২০২৫ সালে এ সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ১ কোটি ২০ লাখে।
৯. গুগল (যুক্তরাষ্ট্র)

গুগলের পিক্সেল সিরিজ আলাদা জায়গা দখল করেছে।
- বাজারে শেয়ার প্রায় ২%।
- উন্নত ক্যামেরা, এআই ফিচার ও দীর্ঘমেয়াদী সফটওয়্যার সাপোর্ট এ ব্র্যান্ডকে অনন্য করেছে।
- ২০২৪ সালে বাজারে এসেছে ৬০ লাখ ফোন।
- ২০২৫ সালে সরবরাহ বাড়তে পারে ৮০ লাখে, আর আয় হবে ১২৭ কোটি ডলার।
১০. অনার (চীন)

অনার শুরু হয়েছিল হুয়াওয়ের সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে, পরে আলাদা কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
- বাজারে অবদান প্রায় ৩%।
- তুলনামূলক কম দামে আধুনিক ফিচার ও আকর্ষণীয় ডিজাইন অনারকে জনপ্রিয় করেছে।
- ২০২৪ সালে এসেছে প্রায় ৭০ লাখ ফোন।
- ২০২৫ সালে সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৯০ লাখ, আর আয় হবে ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের বাজার এখনো বাড়ছে, আর এর নিয়ন্ত্রণ মূলত দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের হাতে। স্যামসাং ও অ্যাপল শীর্ষে থাকলেও, শাওমি, ভিভো, অপো, ওয়ানপ্লাস ও রিয়েলমির মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলো বাজারে ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি, মূল্য ও উদ্ভাবন নির্ধারণ করবে কোন ব্র্যান্ড ভোক্তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।