জীবনের নানা সময়ে গাড়ি আমাদের শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং স্মৃতির ভাণ্ডারও বয়ে আনে। আমার অভিজ্ঞতায় গাড়ি কেনা মানে ছিল শুধু একটি যানবাহন পাওয়া নয়, বরং পরিবারের হাসি, স্বপ্ন আর নতুন পথচলার শুরু। সত্তরের দশকের নাইজেরিয়া থেকে শুরু করে আজকের ভারতে আধুনিক গাড়ি কেনা পর্যন্ত—প্রতিটি ধাপে রয়েছে আবেগ, অভিজ্ঞতা আর ভালোবাসার গল্প। এই গাড়ির গল্পগুলো আমার জীবনের মতোই রঙিন, কখনো আনন্দে ভরা, কখনো দুর্ঘটনার তিক্ত স্মৃতি, আবার কখনো নতুন গাড়ি হাতে পাওয়ার অদ্ভুত উত্তেজনা। আর এই যাত্রার প্রতিটি ধাপ আজও মনে করিয়ে দেয়—গাড়ি শুধু মেশিন নয়, এটি স্মৃতির অংশ।
কলেজ জীবনের প্রথম সঙ্গী বাজাজ চেতক

আশির দশকের শুরুতে বাবা বিদেশ থেকে আমাকে ভারতে পড়াশোনার জন্য পাঠান। তখন তিনি উপহার দেন বাজাজ চেতক স্কুটার। সেই সময়ে এটি পাওয়া ছিল অনেক কঠিন, দীর্ঘ অপেক্ষার বিষয়। তবে বাবা ব্রিটিশ পাউন্ডে বুক করায় মাত্র ছয় মাসেই হাতে পাই স্কুটারটি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার দিনগুলোতে প্রতিদিন এই স্কুটারেই যাতায়াত করতাম। ইন্ডিকেটর লাইট লাগানো, স্টিকার দিয়ে সাজানো, আর স্পেয়ার টায়ার খুলে ‘কুল লুক’ দেওয়ার সেই দিনগুলো এখনো মনে আছে। চেতকের দ্রুতগতির পিকআপে সামনের চাকা মাঝে মাঝেই মাটি ছাড়ত—যেন সত্যিই এক দৌড়ানো ঘোড়া।
নাইজেরিয়ায় গাড়ির অভিজ্ঞতা
সত্তরের দশকে আমরা পরিবারসহ নাইজেরিয়ায় থাকতাম। তখন দেশটি ধনী ওপেক সদস্য হওয়ায় সব ধরনের গাড়ি সহজলভ্য ছিল। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, হাতে ছিল সরকারি গাড়ি, তবে কখনো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন না। তাই পরিবার মিলে শোরুম ঘুরে নিজেদের জন্য গাড়ি খুঁজতে থাকি। একেকটি শোরুম মানেই ছিল আমাদের পরিবারের কাছে উৎসব।
আরো পড়ুন: দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফেরাতে দেশীয় চিপ উদ্ভাবন করলো আইআইটি ধানবাদের গবেষকরা
অবশেষে কেনা হয় একটি প্লাইমাউথ অ্যাভেঞ্জার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছুদিনের মধ্যেই দুর্ঘটনায় পড়ে গাড়িটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তবে ঈশ্বরের কৃপায় আমরা সবাই অক্ষত ছিলাম। পরে কেনা হয় মরিস মারিনা, একটি স্টেশন ওয়াগন। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের গাড়িপ্রেম আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে আধুনিক গাড়ি কেনা
সময় বদলেছে, গাড়ি কেনার ধরনও পাল্টেছে। শোরুমে গিয়ে ডেলিভারি নেওয়ার রীতি অনেকটাই কমেছে। আমি নিজে অনলাইনে বুকিং দিয়ে বাড়িতেই গাড়ি গ্রহণ করেছি।
- স্করপিও VLX: আমেরিকায় থাকাকালীন ভারতে টাকা পাঠিয়ে বুক করি। ছুটিতে দেশে ফিরে বাড়িতেই হাতে পাই গাড়ির চাবি।
- ক্রিস্টা Z: অনলাইনে বুক করা গাঢ় মেরুন রঙের গাড়ি না পেয়ে, সাদা রঙের প্রস্তুত গাড়ি একই দিনে গ্রহণ করি প্রবল বর্ষণের মাঝে।
- জিমনি আলফা: বেঙ্গালুরুতে বসেই পেমেন্ট করি, আর বিশাখাপত্তনমের বাড়িতে গাড়ি পৌঁছে যায় বন্ধুর মাধ্যমে।
এমনকি একবার আমেরিকায় শুধু শখের বসে শোরুম ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ করেই কিনে ফেলেছিলাম একটি মার্সিডিজ।
ভবিষ্যতের গাড়ি কেনার অভিজ্ঞতা
আজকের দিনে অনলাইনে গাড়ি কেনা যেমন সহজ হয়ে গেছে, তেমনি হয়তো একদিন আমরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ‘এক ক্লিকে’ গাড়ি কিনব। কিংবা অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে বিশাল ডিসকাউন্টে গাড়ি পাওয়া যাবে। তবে গাড়ি যতই সহজলভ্য হোক, প্রতিটি গাড়ির সাথে জড়িয়ে থাকা গল্প, আবেগ আর স্মৃতিগুলোই সবচেয়ে মূল্যবান।




