Wednesday, September 17, 2025
Homeদেশে বাড়ছে স্বর্ণের দাম, ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে বড় ধস

দেশে বাড়ছে স্বর্ণের দাম, ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে বড় ধস

বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার প্রভাবে দেশেও সোনার দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ১০ হাজার টাকারও বেশি। এতে করে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায়। মাসের শুরুতে এই দাম ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৮ টাকা।

পাঁচ দফায় মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভোক্তারা এখন আগের তুলনায় ভরিপ্রতি ১০ হাজার ১৫৯ টাকা বেশি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই মূল্যবৃদ্ধি স্থানীয় জুয়েলারি বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রমাগত দাম বাড়ার কারণে দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিয়েশাদি বা পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া সাধারণ ক্রেতারা এখন স্বর্ণালংকার কিনতে আগ্রহী নন।

জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসার অবস্থা একেবারে শোচনীয়। দোকানে ক্রেতা নেই বললেই চলে।”

ছোট প্রতিষ্ঠানের সংকট

খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম আরও বাড়লে ছোট ও মাঝারি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক বিপদে পড়বে। দেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি সীমিত হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক কারণ ও প্রভাব

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্থির সময়ে বিভিন্ন দেশ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নেয়।

আরো পড়ুন: সোনার দামের ট্রেন কত দুর যাবে

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত বুধবার স্পট মার্কেটে এক পর্যায়ে দাম ৃ ৩ হাজার ৬৫৪ ডলারে পৌঁছেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

অস্ট্রেলিয়ান ঋণদাতা এএনজেড গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ ডলার হতে পারে। আগামী জুন নাগাদ এই দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া

উচ্চ মূল্যের কারণে অনেক মানুষ এখন নতুন অলংকার কেনার পরিবর্তে পুরানো স্বর্ণ বিক্রি করছেন। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচ বছর আগে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকায় কেনা এক ভরি অলংকার এখন প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।

তবে বিক্রয়ের সময় বর্তমান ওজন থেকে ১৭ শতাংশ কেটে নেওয়া হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার সময় সোনার ভরি ১৭০ টাকা থাকলেও গত পাঁচ দশকে তা বেড়ে ১ হাজার ৯৩ গুণ হয়েছে। বিশেষত গত আড়াই দশকে এই বৃদ্ধি তীব্র হয়েছে।

২০০০ সালে যেখানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি ছিল ৬ হাজার ৯০০ টাকা, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৪২ হাজার ১৬৫ টাকা। গত বছর জুলাইয়ে প্রথমবার ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায় স্বর্ণের দাম।

বিশেষজ্ঞ মতামত

জুয়েলার্স সমিতির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, দেশে স্বর্ণের দাম দুই লাখ টাকা স্পর্শ করতে বাকি রয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। তার মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও ১০০-১২০ ডলার বাড়লে দেশীয় বাজারেও দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, “সোনার বাজার খুবই অস্থির। অলস টাকা থাকলে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, অন্যথায় এটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়।”

স্থানীয় বাজারের এই পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নির্ভর করবে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর।

Ratan Datta
Ratan Datta
আমি রতন দত্ত "স্টার শান্ত" ওয়েবসাইটে ম্যানেজিং ও এডিটর হিসেবে নিয়োজিত রয়েছি। আমি খেলাধুলা, অটোমোবাইল, বিনোদন ও বিভিন্ন বিষয় লেখালেখি করি এবং আমার লক্ষ্য আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সহজে বোঝানো।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ