বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ ঘোষণার পর থেকেই পুরো দেশ নির্বাচনী আবহে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সরকার ও প্রশাসন
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের সদস্যরা নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সেনাবাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ভোটারদের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে এই বাহিনী।
আরো পড়ুন: পোখরায় বন্দি পর্যটকরা ফেরার চিন্তায়, নেপালের রাস্তায় সেনা টহল
নির্বাচন কমিশনও তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ এবং প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাইয়ের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা
বিএনপির অবস্থান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। দলটির নেতৃত্ব মনে করছে এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি।
জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার আইনগত ভিত্তি নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনশত আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
এনসিপির প্রত্যাশা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদের কার্যকারিতার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। জুনের মধ্যে নির্বাচন হলেও তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ ও লক্ষ্য
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে স্বল্পতম সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। এই সরকার তিনটি মূল লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে:
- জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
- মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিতকরণ
- ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। নির্বাচনের পর তিনি আর সরকারের সাথে জড়িত থাকবেন না।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশা ও সংশয়
দেশের জনগণ একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে কিছু মহল নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সব রাজনৈতিক দল যদি ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে।
এই নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ। দেশের মানুষ একটি ভোট উৎসবের জন্য প্রহর গুনছে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনগুলোর একটি। এর সফলতার উপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক যাত্রা।