কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আমন ধানের ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমন করে কৃষকরা এখন নতুন আশার আলো দেখছেন। বাঁশের কঞ্চি বা গাছের ডাল ক্ষেতে পুঁতে রাখলেই তাতে পাখি বসে ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে এসেছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এতে উৎপাদন খরচ হ্রাস পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরাও পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষকের মুখে হাসি ফেরাচ্ছে পার্চিং

হোসেনপুরের আদর্শ কৃষক নবী হোসেন, আবুল কাশেম ও মকবুল হোসেন জানান, বাঁশের কঞ্চি বসানোর পর থেকেই ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটা কমেছে। আগে যেখানে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এখন তা অর্ধেকেরও কম। ফলে খরচ কমে গেছে এবং লাভের পরিমাণ বেড়েছে।
কম খরচে পরিবেশবান্ধব সমাধান
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পার্চিং পদ্ধতিতে কৃষকের আলাদা কোনো খরচ নেই। শুধু ক্ষেতের মধ্যে বাঁশ বা ডাল পুঁতে দিলেই পাখিরা স্বাভাবিকভাবে পোকা খেয়ে ফেলে। এতে ক্ষতিকারক পোকা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি উপকারী পোকাও সহজে চেনা যায়। কৃষকেরা বুঝতে পারছেন, পোকা দেখলেই কীটনাশক ব্যবহার জরুরি নয়।
আরো পড়ুন: আজকের রাশিফল ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: মেষ থেকে মীন রাশি পর্যন্ত কী বলছে জ্যোতিষী
কীটনাশক ছাড়াই বাড়ছে উৎপাদন
গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল ও আবুল হাশিম জানান, এই পদ্ধতিতে এবার তাঁদের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। কীটনাশকের খরচ কমে যাওয়ায় তাঁরা বেশি লাভের আশা করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণভাবে একটি পাখি প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ক্ষতিকর পোকা খেতে পারে। একটি বড় পোকা যেখানে ২৫০টির বেশি ডিম দেয়, সেখানে পাখিরা তা খেয়ে ফেলায় পোকার বংশবিস্তার রোধ হয়। এতে জমির ভারসাম্য রক্ষা হয়, জীববৈচিত্র্য টিকে থাকে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে।
হোসেনপুরে পার্চিংয়ের সাফল্য
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান কবির জানান, এ বছর হোসেনপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৮,৫৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। চাষিদের মধ্যে পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এভাবে কীটনাশক নির্ভরতা কমে গেলে কৃষকরা শুধু লাভবান হবেন না, বরং পরিবেশও আরও সুরক্ষিত হবে।