নেপালের রাস্তায় তরুণদের আন্দোলন ও সহিংসতায় ২০ জনের প্রাণহানির পর অবশেষে সরকার ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম পুনরায় চালু হওয়ায় দেশজুড়ে স্বস্তি ফিরলেও সরকার ও জনগণের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
অবশেষে নেপালে উঠল সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা, রাস্তায় রক্ত ঝরার পর সরকারের বড় সিদ্ধান্ত
রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর অবশেষে দেশটির সরকার ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মগুলোতে কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে তরুণ সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সোমবার রাতে জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানায় প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির মন্ত্রিসভা।
যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং জানিয়েছেন, সরকার জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “সরকার জেন জি প্রজন্মের আবেগ বুঝেছে। তাই আমরা চাই সবাই ঘরে ফিরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুক।” একই সঙ্গে সহিংসতায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর জন্য সরকারি নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার রায় দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে সরকার ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করলেও বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্ম তা মানেনি। এর জেরেই গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয় নিষেধাজ্ঞা।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তরুণ সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন, যা দ্রুত রূপ নেয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ অমান্য করে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে। এর পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক।
প্রধানমন্ত্রী অলি জানিয়েছেন, অনেক প্ল্যাটফর্ম নেপালে নিবন্ধন করতে চায় না। বিশেষ করে এক্স (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, তারা সরকারিভাবে নেপালের আইন মেনে চলবে না। অলি বলেন, “এটি আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়। আমরা দেড় বছর ধরে চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।”