ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের সন্দেহ-সংশয় কাটিয়ে এবার আয়োজন হতে যাচ্ছে নতুন এক নির্বাচন। ডাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না, এ নিয়েই শিক্ষকদের বড় অংশ কিছুদিন আগেও দ্বিধায় ছিলেন। তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সহযোগিতার কারণেই এ আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের ভিন্নতা
২০২৫ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে বলা হচ্ছে ব্যতিক্রমী। এবার প্রার্থী ও ভোটারের সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক, আলোচনা ও প্রস্তুতির পর অবশেষে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনী কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তেমন কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
বিশেষ বিষয় হলো, এবার প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। ২০১৯ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থীরা এমন দাবি তুলেছিলেন। পাশাপাশি গঠনতন্ত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যদিও ছাত্র সংগঠনগুলো এখনো বলছে, তাদের কিছু প্রস্তাব মানা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও নির্বাচন পরিবেশ
ডাকসু নির্বাচন এবারও দলীয় প্যানেলের বাইরে হলেও শিক্ষার্থীদের প্রচারণায় প্রার্থীদের দলীয় পরিচয় সামনে চলে এসেছে। তবু অধিকাংশ প্রার্থী জয়ী হওয়ার আশা করছেন। অনলাইন ও ক্যাম্পাসে প্রচারণা চললেও নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আরো পড়ুন: আজকের রাশিফল ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫: মেষ থেকে মীন পর্যন্ত দিনের ভবিষ্যৎ
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবারও প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টোরিয়াল টিম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ভোট গণনা ও ফলাফল স্বচ্ছ রাখতে শিক্ষক, প্রযুক্তিবিদ এবং সিসি ক্যামেরা-এলইডি স্ক্রিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই ছাত্র সংসদের যাত্রা শুরু হলেও স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রায় তিন দশক এই নির্বাচন কার্যত বন্ধ ছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের পথচলা
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, ডাকসু নির্বাচন যদি নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে যুক্ত হয়, তবে এ নিয়ে আর অনিশ্চয়তা থাকবে না। এমনকি অনলাইন ভোটিং প্রক্রিয়া চালু হলে অনেক জটিলতাও কমে আসবে।
ডাকসুকে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার অন্যতম মঞ্চ হিসেবে দেখা হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাসে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনও শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।