রাজনীতি যখন রক্তে লিখিত হয়, তখন নীরব থাকা অপরাধ। এমন এক মুহূর্তেই আবারও গানের মঞ্চ ছেড়ে রাজনৈতিক বাস্তবতার সামনে দাঁড়ালেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর। শুধু গান নয়, আজ তার কণ্ঠ আওয়াজ তুলছে ন্যায়বিচারের জন্য।
শুক্রবার রাতে ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। ইট-পাটকেল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, রক্তাক্ত মুখ, ফাটা নাক – ভিডিওতে দেখা যায় তাকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে। জ্ঞান ফিরেছে তার, কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিকদের মনে প্রশ্ন জাগছে – কত রক্ত আর?
এই ঘটনার পর শনিবার ফেসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ক্ষোভপূর্ণ পোস্ট করেন আসিফ আকবর। তিনি লিখেন, “আগে ভাবতাম রাজনৈতিক দলের মন্ত্রীরা দায় নিয়ে পদত্যাগ করে না, তারা নির্লজ্জ। এখন দেখি ঐ চেয়ার নির্লজ্জদের জন্যই।”
কোনো নাম নেই, কোনো দলের ইঙ্গিত নেই। তবু কথাগুলো বিদ্যুৎ-স্পর্শের মতো ছুঁয়ে যায় সমাজের অনেকের মন। অনেকের ধারণা, এই পোস্টের লক্ষ্য আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। কারণ, ঘটনার পরপরই তিনি ফেসবুকে প্রতিবাদ জানালেও, তার পোস্টে কোনো দায়বদ্ধতা বা তীব্র সমালোচনা ছিল না। তার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নেটিজেনরা। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেকেই মন্তব্য করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন:
শাপলা চত্বর ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির
আসিফ আকবর আগেও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি নতুন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সমর্থন মানে চোখ বন্ধ করা নয়। তিনি স্পষ্ট করেছিলেন, তিন মাস পর আলোচনা-সমালোচনা করবেন। আজ সেই প্রতিশ্রুতি রাখছেন তিনি।
শিল্পী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে তিনি প্রশ্ন তুলছেন – কেন রাজনীতি এত নিষ্ঠুর? কেন ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকার জন্য মানুষ মানবিকতা হারাচ্ছে? কেন নিরপরাধদের রক্তে লেখা হচ্ছে রাজনৈতিক অধ্যায়?
আসিফ আকবরের এই পোস্ট শুধু একটি মন্তব্য নয়, এটি একটি আহ্বান। আহ্বান ন্যায়বিচারের, দায়বদ্ধতার এবং মানবিকতার। যখন ক্ষমতা নির্লজ্জতায় পরিণত হয়, তখন গায়কের গান থামে, কিন্তু কণ্ঠ আরও জোরালো হয়।
রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তবে কেন জনগণ তার ভয় পায়? আসিফ আকবরের প্রশ্ন আজ আমাদের সবার প্রশ্ন।