ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে আসা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)কে অবরুদ্ধ করে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ধারী একদল ব্যক্তি। পরে তাদেরসহ মোট ১৫ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করেছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামক একটি সংগঠন।
গোলটেবিল আলোচনায় উত্তেজনা
সকাল ১০টায় শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টায় আলোচনা সভা শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের।
আলোচনায় প্রথম বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।”

শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। তারা ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন:
- “জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”
- “লীগ ধর, জেলে ভর”
- “জুলাইয়ে যোদ্ধারা এক হও লড়াই করো”
একপর্যায়ে তারা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
আরো পড়ুন:
৪ সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাব
পুলিশে সোপর্দ
দুপুর সোয়া বারোটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল ঘটনাস্থলে এলে প্রতিবাদকারীরা লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানসহ কমপক্ষে ১৫ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ডিআরইউ-এর সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য: সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি জানতাম না এখানে সমস্যা হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েই এসেছিলাম।”
প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য: আল আমিন রাসেল নামের একজন প্রতিবাদকারী বলেন, “আমরা জুলাই যোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।”
জামায়াত নেতার বক্তব্য
পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, “একটি গোষ্ঠী একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি করে চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, একাত্তর আমাদের ভিত্তি এবং চব্বিশ আমাদের মুক্তি। এখানে যাঁরা জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই চব্বিশের খুনের সঙ্গে জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। আমরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করেছি।”
অন্যান্য উপস্থিত
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মঞ্চ ৭১-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।
এই ঘটনা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মতাদর্শের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।