রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। এ সফরে তিনি বিএনপি-জামায়াত, এনসিপি থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সবার সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। তবে আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও অমীমাংসিত ইস্যুগুলো।
ক্ষমা প্রার্থনা এড়িয়ে গেলেন দার
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার প্রশ্নে মুখোমুখি হলে ইসহাক দার দাবি করেন, এ বিষয়ে অন্তত দুই দফা সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে এবং পরবর্তীতে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ঢাকায় এসে পুরো পাকিস্তান জাতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেসব দলিল আজও দুই দেশের কাছেই সংরক্ষিত রয়েছে।
তবে গণহত্যার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তিনি ধর্মীয় উদ্ধৃতি টেনে বলেন, “ইসলাম, কোরআন ও মহানবী (সা.)-এর হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়, অতীত ভুলে গিয়ে নতুন করে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে। পরিবারের মধ্যে যেমন সমাধান হয়ে যায়, তেমনি আমাদেরও এখন হৃদয় পরিষ্কার করে এগিয়ে যেতে হবে।”

সমালোচনার ঝড়
ইসহাক দারের এই বক্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “একাত্তরের গণহত্যার দায় স্বীকার না করেই পাকিস্তান এখন বাঙালিকে হৃদয় পরিষ্কারের হাদিস শোনাচ্ছে।”
আরো পড়ুন: সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে হাজির
বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা
- স্বাধীনতার সময়কার পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য বণ্টন
- দুই দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের প্রত্যাবাসন

বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমরা চাই আর্থিক বিষয়গুলোর সমাধান হোক, গণহত্যার জন্য পাকিস্তান দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাইুক, আর যারা এখানে আটকে আছেন তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হোক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটা শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, এটি ইতিহাসের দায়। তাই এর সঠিক নিষ্পত্তি ছাড়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু সম্ভব নয়।”