সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞ ও ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে দেশ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এক বছর আগে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল আমাদের। তবে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।”
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব
রোহিঙ্গা সংকটকে আরও জোরালোভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সংলাপ শুরু হয়েছে রবিবার। ‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই–লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ আয়োজনে সোমবার স্থানীয় একটি হোটেলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আরো পড়ুন:
টঙ্গীতে নতুন সেতুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তার উত্থাপিত সাত দফা প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো হলো—
- রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন
- আন্তর্জাতিক দাতাদের অব্যাহত সহায়তা নিশ্চিত করা
- মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা সুরক্ষার দাবি
- রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও তাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
- আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা
- গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর আন্তর্জাতিক অবস্থান
- আন্তর্জাতিক আদালতে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি ত্বরান্বিত করা
নির্বাচন ও সংকট সমাধানে আশাবাদ
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি জোরালো প্রত্যাশা উঠে এসেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।