কমিউটার মোটরসাইকেলের জগতে একসময় সরল নকশা, সাধারণ ফিচার আর স্বল্প শক্তিই ছিল ভরসা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন প্রতিটি নির্মাতা তাদের বাইকে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ডিজাইন যোগ করছে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে। সেই ধারাবাহিকতায় হিরো মোটোকর্প বাজারে এনেছে হিরো গ্ল্যামার এক্স ১২৫, যা শুধু ফিচার সমৃদ্ধই নয়, বরং ডিজাইনেও নিয়ে এসেছে এক নতুন মাত্রা।

চেহারা ও নকশা
নতুন গ্ল্যামার এক্স-কে বলা হচ্ছে এ পর্যন্ত সবচেয়ে আকর্ষণীয় গ্ল্যামার। বড় আকারের এলইডি হেডলাইট, তার ওপর এক্সএল উইন্ডস্ক্রিন বাইকের সামনের দিকের ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্সকে আরও উজ্জ্বল করেছে। স্কাল্পটেড ফুয়েল ট্যাঙ্ক, শক্তপোক্ত ট্যাঙ্ক এক্সটেনশন, ধারালো বেলি প্যান এবং টারবাইন-আকৃতির অ্যালয় হুইল ডিজাইনকে দিয়েছে আলাদা আবেদন।
যদিও সাইড থেকে দেখলে লম্বা টেল সেকশন কিছুটা ভারসাম্যহীন মনে হতে পারে, তবে কার্যকারিতার দিক থেকে এটি দীর্ঘ আসনের জন্য উপযোগী। সার্বিকভাবে, বাইকের ফিনিশ, পেইন্ট কোয়ালিটি ও ডিটেইলিং যথেষ্ট ভালো মানের।

ফিচার ও প্রযুক্তি
এই বাইকের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর ফিচার প্যাকেজ।
- প্রথমবারের মতো ১২৫ সিসি সেগমেন্টে এসেছে ক্রুজ কন্ট্রোল।
- আছে রাইড-বাই-ওয়্যার প্রযুক্তি এবং তিনটি রাইড মোড—ইকো, রোড ও পাওয়ার।
- রয়েছে ফুল-কালার এলসিডি ডিসপ্লে ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি সহ।
এতে ব্যবহৃত হয়েছে ১২৪.৭ সিসি এয়ার-কুলড সিঙ্গেল-সিলিন্ডার ইঞ্জিন, যা ১১.৪ বিএইচপি শক্তি ও ১০.৫ এনএম টর্ক উৎপাদন করে। পাঁচ-গিয়ার ট্রান্সমিশনসহ এই ইঞ্জিন মসৃণতা ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য পরিচিত।
আরো পড়ুন:
Harley-Davidson Street Bob ভারতীয় বাজারে আত্মপ্রকাশ: জানুন ৫টি হাইলাইট
রাইড অভিজ্ঞতা
বাইকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আরামদায়ক আসন, প্রশস্ত হ্যান্ডেলবার আর সামনের দিকে সেট করা ফুটপেগ চালককে দেয় একধরনের চেয়ারে বসার মতো ভঙ্গি।
- ইকো মোডে থ্রটল রেসপন্স কিছুটা শান্ত হলেও শহরের ট্রাফিকেও দ্রুত ওভারটেক করা সম্ভব।
- রোড মোডে বাইক আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, রেসপন্স দ্রুত হয়।
- পাওয়ার মোডে তরুণদের জন্য বাড়তি উদ্দীপনা রয়েছে—হাইওয়েতে সহজে ওভারটেক করা যায়, সর্বোচ্চ গতি পৌঁছায় প্রায় ১০৫ কিমি/ঘণ্টা।
ক্রুজ কন্ট্রোল দীর্ঘ পথের জন্য সুবিধাজনক হলেও, দেশের সড়কে ঘন ঘন ব্রেক করতে হওয়ায় এর ব্যবহার সীমিত হয়ে যায়।
চ্যাসিসের ভারসাম্য ভালো, ট্রাফিকের ভিড়ে সহজে চালানো যায়। ব্রেকিং মসৃণ হলেও সামনের ডিস্কে আরও কিছুটা ‘বাইট’ থাকলে ভালো হতো। ১২৫ সিসি সেগমেন্টে বাধ্যতামূলক সিবিএস থাকলেও অনেক রাইডার এবিএস প্রত্যাশা করছেন।
চূড়ান্ত মন্তব্য
কমিউটার বাইকের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে হিরো। নতুন গ্ল্যামার এক্স সেই অভিজ্ঞতাকেই আরও আধুনিক রূপ দিয়েছে। আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নত প্রযুক্তি আর আরামদায়ক রাইডিং অভিজ্ঞতা একে করেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১২৫ সিসি সেগমেন্টের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী।
ভারতের বাজারে বাইকটির দাম শুরু হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার রুপি (এক্স-শোরুম) থেকে। এই দামে ক্রুজ কন্ট্রোল, একাধিক রাইড মোড আর আধুনিক ফিচারসহ গ্ল্যামার এক্স নিঃসন্দেহে ক্রেতাদের নজর কাড়বে।
ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদনটি বাইকের প্রাথমিক রাইড অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পূর্ণাঙ্গ রোড টেস্ট জরুরি।