ভারতে গেমার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য শোকের খবর। ভারতের লোয়ার হাউস বুধবার অনলাইন গেমিং নিয়ন্ত্রণ ও প্রোমোশন বিল, ২০২৫ পাস করেছে, যা রিয়েল-মানি গেমগুলিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করছে। বিলটি ইস্পোর্টস এবং মনোরম, অবৈতনিক গেমিংকে উৎসাহিত করবে, কিন্তু অর্থের জুয়া সংক্রান্ত গেমিং শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এই নতুন আইন অনুযায়ী, দেশে কোনো ধরনের রিয়েল-মানি গেম—হোক তা দক্ষতার ভিত্তিতে বা সৌভাগ্যের উপর—চলানো, বিজ্ঞাপন করা, বা লেনদেন করাই নিষিদ্ধ হবে। আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পার্লামেন্টে বলেছিলেন, “এই বিলের মূল লক্ষ্য সমাজের কল্যাণ এবং সমাজে creeping হওয়া বড় অপশক্তিকে রোধ করা।”
রিয়েল-মানি গেমিংয়ে কঠোর বিধিনিষেধ
নতুন বিল অনুযায়ী, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিয়েল-মানি গেমের জন্য কোনো লেনদেন করতে দেওয়া হবে না। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই গেম অফার করলে তাদের তিন বছরের জেল বা ১ কোটি রুপি (প্রায় ১.১৫ লাখ ডলার) পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। এছাড়াও, সেলিব্রিটি বা পাবলিক ফিগার যারা এই ধরনের গেম প্রচার করবেন, তারা দুই বছরের জেল বা ৫০ লাখ রুপি (প্রায় ৫৭,০০০ ডলার) জরিমানা ভোগ করতে পারেন।

মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই আইন আনার কারণ কিছু গেমার আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনার ঘটনা ছিল। তবে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব সমস্যার মূল কারণ হল বিদেশি অনলাইন জুয়া অ্যাপ, যা এই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না।
শিল্পের বিপদ এবং বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
নতুন আইনটি পাশ হওয়ার আগে, ভারতের তিনটি প্রধান গেমিং অ্যাসোসিয়েশন—ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি স্পোর্টস, অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন, এবং ই-গেমিং ফেডারেশন—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, “ভারতের নিয়ন্ত্রিত প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে, কোটি কোটি খেলোয়াড়রা অবৈধ জুয়া ও বিদেশি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।”
রিয়েল-মানি গেমিং স্টার্টআপগুলোর মোট এন্টারপ্রাইজ মান প্রায় ২ ট্রিলিয়ন রুপি (২৩ বিলিয়ন ডলার), এবং বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ৩১০ বিলিয়ন রুপি (৩.৬ বিলিয়ন ডলার)। এই শিল্প ২০২৮ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু এই বিল পাশ হলে, ৪০৩টি কোম্পানি বন্ধ হতে পারে এবং ২ লাখের বেশি চাকরি হারাতে হবে।
ইস্পোর্টস ও ক্যাজুয়াল গেমিংয়ের প্রতি প্রভাব
কিছু ক্যাজুয়াল গেমিং ও ইস্পোর্টস কোম্পানি আইনকে ইতিবাচকভাবে দেখেছে। জিঞ্জার গেমসের সিইও সুমিত বাথেজা বলেন, “এটি আমাদের মনোযোগ রাখতে সাহায্য করবে—কিভাবে ভালো আইপি তৈরি করা যায় এবং ব্যবসায়িক উদ্বেগ মোকাবিলা করা যায়।” তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সঠিক সংজ্ঞা না থাকায় আইনটি ইস্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরো পড়ুন:
ভারতের বিলাসবহুল সৌন্দর্যপণ্যের বাজারে ঝুঁকছে বিশ্ব ব্র্যান্ডগুলো
পর্যালোচনা ও বিতর্ক
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, “নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, কিন্তু হঠাৎ এভাবে আইন আনা ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।” ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী ও গেমিং কোম্পানি এই নতুন বিল নিয়ে উদ্বিগ্ন।
নতুন আইন এখনও রাষ্ট্রপতি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি কার্যকর হলে, ভারতের রিয়েল-মানি গেমিং শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে।
ডিসক্লেইমার: এই নিবন্ধে প্রকাশিত তথ্যের উৎস হলো বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন ও ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট। অনলাইন বা রিয়েল-মানি গেমিং সম্পর্কিত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় আইন ও নিয়মাবলী যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।