ঢাকা: দেশের সব মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য নতুন জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো প্রয়োজনে অধিদপ্তরে গেলে অবশ্যই ছুটি বা অনুমতিপত্র সঙ্গে আনতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (১৮ আগস্ট) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
কেন এ নির্দেশনা জারি করা হলো?
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়মিত বিভিন্ন কাজে অধিদপ্তরে যাতায়াত করেন। এতে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অনেক শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে পাঠদান পায় না।
এই পরিস্থিতি এড়াতে এখন থেকে সব ধরনের কাজ অনলাইনে বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে সরাসরি ডকেটে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া অন্য ব্যক্তি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কোনো আবেদন করা যাবে না।
কোন কোন কাজ অনলাইনে করতে হবে?
অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিচের কাজগুলো কেবল প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে অনলাইনে বা সরাসরি সম্পন্ন করতে হবে:
- এমপিওভুক্তকরণ
- বিশেষ বরাদ্দ প্রদান
- উচ্চতর স্কেল ও পদোন্নতি
- ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন
- এমপিও শিটে নাম, পদবি ও বিষয় সংযোজন/সংশোধন
- জন্মতারিখ সংশোধন
- বকেয়া প্রদান
- প্রশিক্ষণ মনোনয়ন
- ইনডেক্স প্রদান ও ইনডেক্স কাটা
অফিসে গেলে কী নিয়ম মানতে হবে?
- মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী সরাসরি গেলে অবশ্যই ছুটি বা অনুমতিপত্র সঙ্গে আনতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
- নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এর ১৮.১ (খ) ও (গ) অনুচ্ছেদ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনাকে ‘অত্যন্ত জরুরি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ বলেন, প্রায়ই এমপিও সংক্রান্ত কাজ, জন্মতারিখ সংশোধন বা ইনডেক্সের জন্য আমাদের অধিদপ্তরে যেতে হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ব্যাহত হয়। অনলাইন বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে এসব কাজ করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
আরেকজন শিক্ষক জানান, যদি অনলাইন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়, তাহলে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। তবে অনলাইন সিস্টেমে জটিলতা থাকলে শিক্ষকদের হয়রানি বাড়তে পারে।
শিক্ষা কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্দেশনা সঠিকভাবে কার্যকর হলে:
- মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারীরা অযথা অফিসে ঘোরাঘুরি বন্ধ করবেন।
- শিক্ষার্থীরা বাধাহীন পাঠদান পাবে।
- অফিসের কাজও আরও ডিজিটাল ও স্বচ্ছ হবে।
এতে মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা।
সংক্ষেপে নির্দেশনার মূল বিষয়সমূহ
- অধিদপ্তরে কোনো প্রয়োজনে গেলে ছুটি বা অনুমতিপত্র সঙ্গে আনতে হবে
- অনলাইনে বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে কাজ জমা দিতে হবে
- তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আবেদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- নির্দেশনা অমান্য করলে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে
- নির্দেশনাটি অত্যন্ত জরুরি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে