ক্রিকেট খেলার সময় কোনো খেলোয়াড় গুরুতর চোটে পড়লে দলের লড়াই অনেকটা অসম হয়ে ওঠে। সাধারণত একাদশের একজন খেলোয়াড় মাঠে না থাকলে দলকে ১১ জনের বিপক্ষে ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়। এই সমস্যা কমানোর জন্য ক্রিকেটে নতুন বদলির নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। নতুন এই নিয়মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিরিয়াস ইনজুরি রিপ্লেসমেন্ট সাবস্টিটিউট’।
নিয়মের কার্যকরী পর্যায়
সব ধরনের ক্রিকেটে এখনই নিয়মটি চালু হচ্ছে না। আপাতত ভারতীয় বোর্ডের অধীনে চলা একাধিক দিনের ম্যাচের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে এটি প্রযোজ্য হবে। নতুন মৌসুমে দুলিপ ট্রফি থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। দুলিপ ট্রফিতে ভারতের চারটি অঞ্চল অংশগ্রহণ করে চারদিনের ম্যাচ খেলে এবং আসর শুরু হবে আগামী ২৮ আগস্ট। এছাড়া ভারতের মূল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতেও বদলির এই নিয়ম চালু থাকবে।
বদলির শর্তাবলী

নিয়ম অনুযায়ী, খেলা শুরুর পর কোনো খেলোয়াড় গুরুতর চোট পেলেই তাকে বদলানো যাবে। তবে চোট বহিঃস্থ (এক্সটারনাল) হতে হবে। যেমন: বড় কোনো আঘাত, চিড় ধরা বা গুরুতর কেটে যাওয়া। সাধারণ হ্যামস্ট্রিং টান, ক্র্যাম্প, স্ট্রেইন বা মেদবহুল ক্ষত থাকলে খেলোয়াড়কে বদলানো যাবে না।
চোটাক্রান্ত খেলোয়াড়ের চোটের গভীরতা যাচাই করতে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে হবে এবং ম্যাচ রেফারির অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদনের পরে স্কোয়াডের অন্য খেলোয়াড়কে বদলি হিসেবে নামানো সম্ভব। তবে বদলি খেলোয়াড়কে অবশ্যই ‘লাইক-ফর-লাইক’ হতে হবে। অর্থাৎ, ব্যাটসম্যানের বদলি ব্যাটসম্যান, বোলারের বদলি বোলার এবং অলরাউন্ডারের বদলি অলরাউন্ডার হতে হবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা শুরু হওয়ার পর শুধুমাত্র কনকাশন বা কোভিড আক্রান্ত হলে খেলোয়াড়কে বদলি করা যায়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে সদস্য দেশ চাইলে নতুন নিয়ম চালু করতে পারে। গত জুনে আইসিসি এই অনুমতি জানিয়েছিল।
সম্প্রতি ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজে রিশভ পান্ত এবং ক্রিস ওকসের চোট নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পান্ত পায়ে চোট পেয়েও দলের প্রয়োজনে ব্যাটিংয়ে নামেন, আর ওকস ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া অবস্থায় এক হাতে স্লিং ধরে অন্য হাতে ব্যাট নিয়ে মাঠে নামেন। এই ঘটনা থেকেই বোর্ডের সভায় নতুন বদলির নিয়ম চালুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
আপনার জন্য: সিপিএল ২০২৫: সাকিবের অ্যান্টিগা ফ্যালকনস প্রথম জয়, ডি ককের নতুন রেকর্ড
ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর এই নিয়মের পক্ষে ছিলেন। তিনি মনে করেন, গুরুতর চোটে থাকা খেলোয়াড়কে মাঠে নামানো ঠিক নয়, দলের নিরাপত্তা ও খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস নিয়মের পক্ষে ছিলেন না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে গুরুতর চোটে বদলির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।

নতুন নিয়মের গুরুত্ব
ক্রিকেটে এই বদলির নিয়ম চালু হলে দলগুলোকে বড় সুবিধা হবে। একদিকে গুরুতর চোটপ্রাপ্ত খেলোয়াড়কে মাঠে নামানো থেকে রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে দলের খেলার সমতা বজায় থাকবে। ফলে ম্যাচের ফলাফলে চোটপ্রাপ্ত খেলোয়াড়ের কারণে দলগত অসুবিধা কমবে।
এছাড়া নতুন নিয়ম খেলোয়াড়দের শারীরিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যরক্ষা নিশ্চিত করবে। ঘরোয়া পর্যায়ে এই নিয়ম চালু হওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিযোগিতা আরও সুষ্ঠু ও নিরাপদ হবে।
বিসিসিআইয়ের এই উদ্যোগ ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। দুলিপ ট্রফি ও রঞ্জি ট্রফিতে বদলির নিয়ম প্রয়োগের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা চোট থেকে দ্রুত সুরক্ষা পাবেন, আর দলের খেলার মানও বজায় থাকবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ও ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রয়োগ একত্রে নতুন নিয়মকে আরও কার্যকর করে তুলবে।