পাকিস্তানে শেষ দুই দিনে প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৮৮০ জনের বেশি। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উদ্ধারকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধারের জন্য প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন। তারা জেলার নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে উদ্ধার কাজ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়েজি বলেন, প্রবল বৃষ্টি, ভূমিধস ও সড়ক ডুবে যাওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। অনেক এলাকায় সড়ক বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে দুর্গম অঞ্চলে কাজ করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ও পরিস্থিতি
বুনের, বাজৌর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা, বাট্টাগ্রামসহ বেশ কিছু পাহাড়ি জেলা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাদেশিক সরকার এসব এলাকায় দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএ) জানিয়েছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১১ জন ও গিলগিট বালতিস্তানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে দুজন পাইলট ছিলেন।
এনডিএর প্রতিনিধি সৈয়দ মোহাম্মদ তায়েব শাহ জানান, এ বছর মৌসুমি বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়বে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
বুনের জেলার বাসিন্দা আজিজুল্লাহ বলেন, আমি ভেবেছিলাম কেয়ামত নেমে এসেছে। প্রচণ্ড শব্দ শুনে বাইরে বের হওয়ার পর দেখলাম পুরো এলাকা কাঁপছে, মনে হচ্ছিল মৃত্যু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সোয়াত জেলার এক আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, সড়ক কাদাপানিতে তলিয়ে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি আংশিকভাবে কাদার নিচে চাপা পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টি এবং ভূমিধস সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে। ২০২২ সালের মৌসুমি বন্যায় দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আরো দেখুন: বাংলাদেশ সীমান্তে আবারও বিএসএফের গুলি, পঞ্চগড়ে নিহত ১
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাকিস্তানে প্রতিনিয়ত চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।