
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমান আছরে পরেছে। বিমানটির মডেল হলো এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই হায়দার হল নামের একাডেমিক ভবনের সামনে বিমানটি আছড়ে পড়েন। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে অনেকেই দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিমানটি যখন আছরে পরেছিলেন তখন কয়েকজন প্রত্যক্ষ দেখেছিলেন তাদের মাধ্যমে জানা গেছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো ভবন এলাকাটি। ফায়ার সার্ভিসের ৮ থেকে ৯টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও সেখানে এসেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিমা খানম জানান, তারা দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় এবং ১টা ২২ মিনিটে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহতদের মধ্যে চারজনকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ জনের বেশি দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলা যায়।
ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫ জনের মধ্যে দুজন শিক্ষক রয়েছে এবং বাকি সবাই শিক্ষার্থী বলে জানান হাসপাতালের প্রশাসন শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, “যাদের কম বার্ন তাদের এখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের বেশি পুড়ে গিয়েছে, তাদের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হচ্ছে।”
ঘটনাস্থলে থাকা অভিভাবক লাকি আক্তার বলেন, তার দুই সন্তান মাইলস্টোন স্কুলে পড়াশোনা করেন। বড় সন্তানকে তিনি বের করতে পেরেছেন, তবে ছোট সন্তান এখনও আটকা রয়েছেন ভবনটিতে। একইভাবে ফেরদৌসি বেগম নামে আরেক অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে স্কুল ভবনের ভেতরে আটকে রয়েছে, এখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্কুলটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সবুজ মিয়া বলেন, “দোতলার প্রবেশমুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তখন ক্লাস শেষ হলেও অনেক শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে ছিল।” দুর্ঘটনার সময় ভবনটিতে ক্লাস চলছিল বলে জানান স্কুলের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল।
আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাইলট ছাড়া বিমানে আর কেউ ছিল না প্রশিক্ষণ বিমানটিতে। তবে এফ-৭ বিজিআই মডেলের এই প্রশিক্ষণ বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হলো, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

সার্বিকভাবে ঘটনাটি রাজধানীজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অভিভাবক, সাধারণ মানুষ এবং সংবাদকর্মীদের ভিড়ে গোটা এলাকা এখন সরব ও শোকাবহ।
মূল তথ্যসমূহ সংক্ষেপে:
- বিমান মডেল: এফ-৭ বিজিআই (বাংলাদেশ বিমান বাহিনী)
- উড্ডয়ন সময়: দুপুর ১টা ৬ মিনিট
- দুর্ঘটনা স্থান: উত্তরা, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হায়দার হল
- সময়: ২১ জুলাই, সোমবার
- পাইলট নিহত
- দগ্ধ শিক্ষার্থী: অর্ধশতাধিক
- চিকিৎসা কেন্দ্র: জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল
- উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে: ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি
- আগুন ও বিস্ফোরণ: বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়