
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২টি সিনেমা: বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে আসা এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানা গেছে, দেশের ৩২টি চলচ্চিত্র প্রকল্প পাবে সরকারি আর্থিক অনুদান। এর মধ্যে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা অন্তর্ভুক্ত হবে। অনুদানের টাকার পরিমান হলো ৯ কোটি টাকা। এই সিদ্ধান্তকে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে?
- পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: প্রতি ছবির জন্য ৭৫ লাখ টাকা
- স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: প্রতি ছবির জন্য ২০ লাখ টাকা
- মোট বরাদ্দ: ৯ কোটি টাকা
এমন সহায়তা পেলে নবীন ও অভিজ্ঞ নির্মাতাদের জন্য সৃজনশীলতা বাস্তবায়নের একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২টি সিনেমা
১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম
১. রবিনহুডের আশ্চর্য অভিযান
২. মায়ের ডাক
৩. জুলাই
৪. রূহের কাফেলা
৫. পরোটার স্বাদ
৬. খোঁয়ারি
৭. জীবন অপেরা
৮. জলযুদ্ধ
৯. কবির মুখ দ্যা টাইম কিপার
১০. কফিনের ডানা
১১. নওয়াব ফুজুন্নেসা
১২. জুঁই
বৈচিত্র্যে ভরপুর গল্প ও বিষয়বস্তু
এই চলচ্চিত্রগুলোর থিম নানারকম ঐতিহাসিক, সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক। এর মধ্যে “রবিনহুডের আশ্চর্য অভিযান” হতে পারে একটি রোমাঞ্চকর ফ্যান্টাসি ধাঁচের সিনেমা, আবার “জুঁই” হতে পারে এক আবেগময় নারীকেন্দ্রিক বাস্তব গল্পের সিনেমা।
২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা
- মন্দ-ভালো
- ফেলানী
- ঝুঁকির মাত্রা
- জীবনের গান
- হু হ্যাজ মেইড আস ফ্লাই
- ভরা বাদর
- ১২৩০
- বৃন্দারাণীর আঙুল
- একটি সিনেমার জন্য
- দাফন
- সাঁতার
- মাংস কম
- গগন
- অতিথি
- বোবা
- অদ্বৈত
- আশার আলো
- গর্জনপুরের বাঘা
- হোয়ার দ্য ওয়াটার স্লিপস
- অপসময়
নতুন প্রজন্মের ভাবনা ও ভিন্নমাত্রা
এই স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা গুলোতে উঠে আসবে সামাজিক বৈষম্য, নারী অধিকার, প্রকৃতি ও প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব, এবং দেশ ও বিশ্বের বাস্তবতা। বিশেষ করে “ফেলানী” ও “দাফন” শিরোনামগুলো ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগ্রহ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে।
অন্যান্য তথ্য পেতে ভিডিট করুণ: তোয়ান
চলচ্চিত্র শিল্পে সরকারি অনুদানের গুরুত্ব
- অর্থের অভাবে ঝরে পড়ে অনেক প্রতিভা। ভালো গল্প ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তার সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় না।
- চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। একটি একটি শৈল্পিক ব্যবসা তাই এই খাতে ঝুকি রয়েছে। এই অনুদান পেলে অনেকটা ঝুকি কমে যায়।
- সরকারি সহায়তা নতুনদের জন্য আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। এর পরবর্তীতে আলো ভালো কিছু আনার সাহস পায় পরিচালকগণ।
অনুদান প্রাপ্তির শর্তাবলি
প্রত্যেকটি অনুদান নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করা হবে। যেমন:
- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন করা
- সরকারের কাছে প্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া
- দেশের ভাবমূর্তির সাথে সংগতি রাখা
অনুদানপ্রাপ্তদের জন্য করণীয়
- চিত্রনাট্যের মান বজায় রাখা
- টেকনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ
- চলচ্চিত্র মুক্তির পূর্বে সেন্সর ছাড়পত্র নিশ্চিত
- স্বচ্ছ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা
বাস্তব তথ্য ও প্রভাব বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে প্রতিবছরই কিছু চলচ্চিত্র সরকারি অনুদান পায়। কিন্তু এবার যেভাবে ৩২টি চলচ্চিত্র একসঙ্গে নির্বাচন করা হয়েছে, তা রীতিমতো নজির বিহীন। এর ফলে দেশের ভিন্ন অঞ্চলের নির্মাতারাও উৎসাহিত হবেন এবং নতুন ধারার সিনেমার প্রকাশ করবে।
সময়ের চাহিদা মেটাতে সিনেমাই শক্ত হাতিয়ার
সিনেমা বা নাটককে বলা হয় সমাজের আয়না। তাই কোন কিছু তুলে ধরা বা শেখানোর জন্য সিনেমা সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। এই অর্থ দিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো যদি সময়োপযোগী ও দর্শকপ্রিয় হয়, তবে তা বাংলা সিনেমার জন্য এক নতুন অধ্যায় শুরু করবে। কারণ দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যে আমাদের দেশে অনেকগুলো সিনেমা ব্যবসায় খুব ভালো করছে আর তাদের সিনেমার শিক্ষা ও অনুভুতি খুবই ভালো।
আরো পড়ুন: অজিত কুমারের ‘AK64’ নিয়ে বড় খবর: আগস্ট ২০২৫-এ আসছে অফিসিয়াল ঘোষণা?
২০২৫ সালে সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২টি সিনেমায় টাকার অনুদান দিয়ে যে বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ সামনে আরো ভালো কিছু দেখানোর, তা এক কথায় সাহসী এবং সময়োপযোগী। তরুণ নির্মাতাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ নিজেদের চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতা পর্দায় তুলে ধরার। ‘ফেলানী’ বা ‘রবিনহুডের আশ্চর্য অভিযান’-এর মতো গল্পগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার দুয়ার। এই উদ্যোগ বাংলা সিনেমাকে নতুন এক দিশা দিতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়।