HomeEducation৯ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ষান্মাসিক মূল্যায়ন নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৪

৯ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ষান্মাসিক মূল্যায়ন নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৪

৯ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ষান্মাসিক মূল্যায়ন নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৪

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা এটি মূলত এটি নমুনা তাই মূল বই পড়ার পাশাপাশি এই নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরগুলো পড়বেন। এই নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরের মতো হুবহু আপনাদের পরীক্ষায় প্রশ্ন বা উত্তর আসবেনা। কিন্তু এই ধরনের নিয়মেই আপনাদের প্রশ্ন করা হবে। তাই আপনি যদি এই নমুনা ও প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখতে পারেন তাহলে আগামী পরীক্ষার ধারণা পেয়ে যাবেন।

ষান্মাসিক মূল্যায়ন – ২০২৪

শিল্প ও সংস্কৃতি

নবম শ্রেণি

নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর

কাজ ১- একক কাজ:

তোমাদের এলাকার সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ কর।

উত্তর:

বিভিন্ন উৎস থেকে শহরের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেগুলো নিম্নরূপ-

আমার নিজ শহরের নাম ঢাকা। ঢাকা শহরে উঁচু উঁচু ভবনে অধিকাংশ মানুষ বাস করে। রাস্তাঘাটে যানজট নিত্যসঙ্গী। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাস করে। শহরে বেশ জাঁকজমকের সাথে কিছু উৎসব পালিত হয় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য উৎসব। পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। শহরে বাংলা বর্ষ বিদায়ের সময় শিল্পকলা একাডেমিতে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ আয়োজন করা হয়।

বাংলা বর্ষবরণের জন্য শহরকে সাজানো হয় নতুন রূপে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হালখাতার আয়োজন করা হয়। পহেলা বৈশাখের দিন র‍্যালী বের করা হয়। শহরের মানুষেরা দলবদ্ধভাবে মেলায় যায় এবং পান্তা-ইলিশ খেয়ে নতুন বছরের আগমন উদযাপন করে থাকে। এছাড়া ১০ই মহররম শিয়া মুসলিমরা তাজিয়া মিছিল করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। ১৪ শাবান দিবাগত রাতে তথা শবে বরাতে এশার নামাজের পরে মসজিদে মসজিদে ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আনুষ্ঠানিক ওয়াজ-নসিহতের পরে মুসল্লিদের মাঝে মিষ্টি বা বিরিয়ানি বিতরণ করা হয়। মুসল্লিরা সারারাত মসজিদে বা নিজগৃহে নফল ইবাদতে মত্ত থাকে। ২৭ রমজান শবে কদরেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মসজিদভিত্তিক অনুরূপ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। মুসলিমগণ রমজান শেষে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল ফিতরের ২ মাস ১০ দিে পর ঈদুল আযহা উদযাপন করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপুজা, কালীপূজাসহ বিভিন্ন পূজা উদযাপন করে। তেমনিভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও স্ব স্ব ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ধর্মীয় উৎসব পালন করেন।

কাজ ২ -একক কাজ:

বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সংস্কৃতি সম্পর্কে লিখ।

উত্তর:

বাংলাদেশের তিনটি জেলা নিয়ে পার্বত্য অঞ্চল গঠিত। জেলাগুলো হলো- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এই তিনটি জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিসত্তাসমূহের মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, চাক, খেয়াং প্রভৃতি। তাছাড়া এই অঞ্চলে বাঙালি জনগোষ্ঠীও বসবাস করে। পাহাড়ে বসবাসকারী প্রতিটি জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। সবুজ পাহাড়ে বসবাসকারী এসব মানুষের বর্ণিল সংস্কৃতি আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

তাঁতশিল্পে পার্বত্য জেলার বুনন শিল্পীদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও করণকৌশল। রাঙামাটি পাহাড়ি তাঁতশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে জুম চাষ এবং তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি। তাই তাদের নাচ, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে জুমের বিষয়টি ফুটে ওঠে। পাহাড়ে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে উৎসবের আয়োজন করে। বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, চাংক্রান পোই প্রভৃতি উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। তাছাড়া পাহাড়ে বসবাস করা প্রত্যেকটি জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ।

প্রশ্ন ৩।

গ্রামীণ সংস্কৃতি, নগর সংস্কৃতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের একটি তালিকা তৈরি কর।

উত্তর:

গ্রামীণ সংস্কৃতি:

মাছ ধরা, কৃষিকাজ, কানামাছি বৌ বৌ, গোল্লাছুট, বৌচি, কুতকুত, দাঁড়িয়াবান্ধা, মার্বেল, হা-ডুডু, মোরগ লড়াই, পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, ভাটিয়ালি গান, ভাওয়াইয়া গান, জারি গান, সারি গান, গরু, ছাগলের পাল, লুঙ্গি, গামছা, ফতোয়া, গেঞ্জি, হস্তশিল্প, টিনের ঘর, ছনের ঘর, টিউবওয়েল, নদী, খাল-বিল, বৈশাখি মেলা, নবান্ন উৎসব ইত্যাদি।

নগর সংস্কৃতি:

চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, শ্রমিক, টিভি, সিনেমা, থিয়েটার, কনসার্ট, উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, আধুনিক গান, নৃত্য, শার্ট-প্যান্ট, কোর্ট, টাই, ব্লেজার, কূলকারখানা, বিল্ডিং, প্রাসাদ, মনোরম স্থাপনা, ওয়াসার পানি, অফিস, আদালত, বাণিজ্য মেলা ইত্যাদি।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃর্তি:

কৃষি কাজ, মাছ ধরা, ছনের ঘর, গোলপাতার তৈরি ঘর, পশু শিকার, জুম চাষ, প্রাকৃতিক পানি ব্যবহার, নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক, বিজু, সাংগ্রাই ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/উপজাতীয় বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণ সম্পর্কে বর্ণনা কর।

উত্তর:

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাজে বর্ষবিদায় ও বরণের কৃতাগুলো জন-উৎসবে রূপ নিয়ে থাকে। অঞ্চল ও জাতিভেদে বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবের নামগুলোও আলাদা আলাদা। সমতলের কোচ ও হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবকে ‘বিহু’ বলে সম্বোধন করে। ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ের বর্মণ নৃগোষ্ঠীরা সন্যাসী পূজা, গাজন, চড়ক পূজার মাধ্যমে চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন করে। আর মণিপুরীরা এ উৎসবকে বলেন ‘বিষ্ণু’। সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অনেকেই এ সময় পালন করে দণ্ডবত। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমারা বর্ষবিদায় ও বরণের এ উৎসবকে বলে ‘বিজু এ উৎসবকে মারমারা বলে সাংগ্রাইস রাখাইনদের ভাষায় এটি ‘সাংগ্রেং’। ত্রিপুরারা বলে বৈসু বা বৈসুক, কোথাও বুইসুক। তারা বলে ‘বিষ’। অন্যদিকে ম্রোরা এ উৎসবের নাম দিয়েছে ‘চোনকান। আর চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা এ উৎসবকে বলে ‘সোংগ্রাইং’। খিয়াং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অনেকেই এ উৎসবকে ‘সাংলান) বলে থাকে।

বিজু চাকমাদের, সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। ফুল বিজু, মূল বিজু ও গয্যাপয্যা দিন- তিন পর্বে বিভক্ত বিজু শুরু হয় ২৯ চৈত্র। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ দিন পাহাড়-টিলা-বন ও গ্রাম ঘুরে ঘুরে শিশু, কিশোর ও বালিকারা সংগ্রহ করেন নানা ধরনের ফুল। ভাতজরা ফুল বা বেই ফুল ব্যতীত বিজু জমে না। ভাতজরা ফুল বিজুর সময়ে ফোটে বলে অনেকে একে বিজু ফুলও বলে থাকেন। সংগৃহীত ফুল নদী বা ছড়ার পাড়ে পূজা করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এদিন ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়। ফুল বিজুর পরদিনই শুরু হয় মূল বিজু। এদিনে চাকমা বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের রান্না হয়। বিজু উৎসবে এসবের ভেতর বিজুর পাজোন বা এক ধরনের মিশ্র সবজি হলো সবার কাঙ্ক্ষিত খাবার।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন ১।

স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কারণ কী?

উত্তর:

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করে আমাদের প্রাণের স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে।

প্রশ্ন ২।

বৈচিত্র্য (Variety) কাকে বলে? ছবি আঁকার উপাদানগুলো কী কী?

উত্তর:

চিত্রকে আকর্ষণীয় করার জন্য তাতে বিপরীতধর্মী উপাদান ব্যবহার করাকে ছবি আঁকার ভাষায় বৈচিত্র্য (Variety) বলে। ছবি আকার উপাদান: ছবি আকার উপাদানগুলো হলো- রেখা, আকৃতি, গড়ন, রং, পরিসর, আলোছায়া ও বুনট।

প্রশ্ন ৩।

১৯৪৭ সালের দেশভাগ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:

ভারতবর্ষ জুড়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে অবশেষে এল ১৯৪৭ সাল। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন দেশের জন্ম হলো যার একটি ছিল ভারত, অন্যটি পাকিস্তান। তৎকালীন পাকিস্তান দেশ ছিল দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, যার একটি পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ, অন্যটি হলো পশ্চিম পাকিস্তান।

রচনামূলক / বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন ১।

মস্তকচলন কাকে বলে? মস্তকচলের বিভিন্ন প্রকার ও ব্যবহারসমূহ লিখ।

উত্তর:

মস্তকলন: অঙ্গগত অভিনয়ের সময় মস্তকের সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করাকে মস্তকচলন বলে। কোনো গান বা অভিনয়ের অর্থ সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি করা হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে মস্তকচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আকম্পিত ধীর গতিতে মাথা উপর-নিচ করাকে আকম্পিত মস্তকচলন বলে। সম্বোধন করা, কাছে ডাকা, উপদেশ দেওয়া, জিজ্ঞেস করা, নির্দেশ দেওয়া, হ্যাঁ সুচক ইঙ্গিত ইত্যাদি অর্থ প্রকাশে আকম্পিত মস্তকচলন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কম্পিত:

দ্রুতগতিতে ও বহুবার মাথা উপর-নিচ করাকে কম্পিত মস্তকচলেন বলে। রাগ-ক্রোধ, বিশেষভাবে বোঝা, তর্ক বিতর্ক ইত্যাদি বোঝাতে কম্পিত মস্তকচলন করা হয়ে থাকে।

ধুত:

ধীরে ধীরে মস্তক ডানে-বামে সঞ্চালন করাকে ধুত মস্তকচলন বলা হয়। পাশে তাকাতে, বিস্ময়-বিষাদ-স্থির বিশ্বাস প্রকাশে ধুত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বিধুত:

ধুতের মতো মস্তক দ্রুত সঞ্চালনকে বিধুত বলা হয়ে থাকে। শীগ্র অনুভূত হওয়া, ভয় পাওয়া, রোগে ভোগা ইত্যাদি বোঝাতে বিধুত মস্তকচলন করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২।

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ব্যক্তিদের অবদান তুলে ধর।

উত্তর:

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার আপামর জনতা অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অত্যাচার, শোষণ ও গণহত্যা বহির্বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হৃদয়ে কড়া নেড়েছিল। বাঙালিদের সাথে তারাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বীভৎস চিত্র তলে ধরে মক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করেছিল।

একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চলের লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা বাংলাদেশের শরণার্থীদের সহায়তার জন্য সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত খবর প্রচার, প্রতিবেদন ও জনমত তৈরিতে আকাশবাণী কলকাতা’ ও তার কলাকুশলীদের অবদান অনন্য।

এছাড়া ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সাহসী বিদেশি বন্ধু। ১৯৭১ সালে তিনি কলম আর ক্যামেরা হাতে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিলেন। তাছাড়া ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি, লেয়ার লেভিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ রচনা করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিতে বিশাল অবদান রাখেন। এ রকম অসংখ্য বিদেশি সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রশ্ন ৩।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শিল্পী-সাহিত্যিকদের অবদান সম্পর্কে লিখ?

উত্তর:

ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে কলকতায় সলির চৌধুরী গণনাট্য সংঘের অসংখ্য গান মুক্তিবাহিনীকে নিরন্তর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অর্থ সংগ্রহের জন্য ভারতের বিখ্যাত চিত্রাভিনেত্রী ওয়াহিদা রহমান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সলিল, চৌধুরী, বাপ্পী লাহিড়ীসহ একটি সাংস্কৃতিক দল বোম্বে, গোয়া, কানপুর, পুনেসহ বিভিন্ন স্থানে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। শরণাথীদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা যৌথভাবে কলকাতা পার্ক,সার্কাস মাঠ, রবীন্দ্রসদন, জোড়বাগান পার্ক, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।

এসব অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামের দুই পুত্র কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ, বনশ্রী সেনগুপ্ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পী সংগীত পরিবেশন করেন।

ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য, প্রকাশ কর্মকার, শ্যামল দত্ত রায়, গণেশ পাইন প্রমুখ শিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

অন্নদাশঙ্কর রায়, দীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, মৈত্রেয়ী দেবী, প্রণব রঞ্জন রায়, শান্তিময় রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী, নির্মল চক্রবর্তী, ড. ফুলরেণু গৃহ, দিলীপ বসু, ইলা মিত্রা, রমেন মিত্র, আবদুর রহমান, ডা. গণি, গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মতো খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

প্রশ্ন ৪।

মুক্তিযুদ্ধে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অবদান লিখ।

উত্তর:

ষাটের দশকে আমেরিকার বিখ্যাত সংগীতদল বিটলসের অন্যতম সদস্য ছিলেন জর্জ হ্যারিসেন। উপমহাদেশের বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। রবিশঙ্কর একদিন হ্যারিসনের কাছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপরে চলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। সে সময়ে তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের মানুষের অসহায়ত্ব, শরণার্থী, ‘যুদ্ধ, বন্যা ইত্যাদির খবর সংগ্রহ করে হ্যারিসনকে দেখান এবং অসহায় এই মানুষের জন্য কিছু একটা করা উচিত বলে পরামর্শ দেন। রুবিশঙ্কর নিপীড়িত, ক্ষুধার্ত, গৃহহীন মানুষের সাহায্যার্থ অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি মিউজিক্যাল কনসার্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন।

দিনটি ছিল রবিবার, ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে দুই পর্বে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বেলা আড়াইটায় এবং রাত আটটায়। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। সেদিন ম্যাডিসন স্কয়ারে দর্শক ছিল কানায় কানায় ভরা। পরিকল্পনার শুরুতে একাধিক অনুষ্ঠ করার কথা না ভাবলেও দর্শক চাহিদার কারণে একই দিনে তাঁরা দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ঐতিহাসিক এই কনসার্টে শেষে মোট আয় হয় দুই লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার চারশত আঠারো ডলার পঞ্চাশ পেনি। এই অনুষ্ঠানের পুরো আয় চেকের মাধ্যমে বাংলাদেশের শরণার্থী শিশুদের সাহায্যার্থে ইউনিসেফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এদিন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুরা যে আয়োজন করেছিলেন, এটির অ্যালবাম পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হলে তা বিখ্যাত গ্র্যামি পুরষ্কার অর্জন করেছিলেন। আর্থিক সহায়ত ছাড়াও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সারা বিশ্বে বিশাল জনমত গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্পীদের এই আয়োজন, পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ তৈরি করতে বাংলাদেশের মানুষকেও অনুপ্রাণিত করেছিল।

প্রশ্ন ৫।

‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের পদক্ষেপসমূহ লিখ।

উত্তর:

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার শিল্পীরা গড়ে তোলেন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’। এই সংস্থার আহ্বায়ক ছিলেন অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। ৬ মার্চ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করার জন্য শপথ করে। সেদিন মিছিল শেষে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, চলচ্চিত্র ও নাটকের পরিচালক, সাংবাদিক, সংবাদকর্মী, চারুশিল্পীসহ প্রায় অর্ধশত বিক্ষুব্ধ শিল্পী আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার সংকল্প করে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় অসহযোগ আন্দোলনের একপর্যায়ে পাকিস্তান সরকার ৮ মার্চ থেকে রেডিও টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য সেসময় রেডিও-টেলিবিশনে রেকর্ডিং ব্যবস্থা সীমিত ছিল। সব অনুষ্ঠানই লাইভ সম্প্রচার হতো। ফলে ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’-এ শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণে সেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার হতে থাকে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ এবং সৃজনশীল লেখক ও শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পথ নাটক মঞ্চস্থ করেন। এসব নাটকে গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ হাসান ইমাম, ড. ইনামুল হক, রওশন জামিল প্রমুখ অভিয়ন করেন।

Star Shanto
Star Shantohttps://starshanto.com/
Shanto Ghose is the CEO and MD of Star Shanto. I have 7 years of Online Experience.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles