দীর্ঘ ৩৫ বছরের অপেক্ষার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবারও শুরু হয়েছে ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্ররাকসু নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মুখে উচ্ছ্বাস, হাতে ব্যালট, আর চোখে প্রত্যাশার ঝিলিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি এক বিশেষ দিন। কারণ, ১৯৮৯ সালের পর এবারই প্রথম রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন, এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন, আর পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।
রাকসুতে মোট ২৩টি পদে ২৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাশাপাশি ১৭টি হলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হল সংসদ নির্বাচন, যেখানে ২৫৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৬০১ জন প্রার্থী এর মধ্যে ছেলেদের ১১টি হলে ৪৬০ জন, আর ৬টি নারী হলে ১৪১ জন প্রার্থী রয়েছেন।
কঠোর নিরাপত্তা:
বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে ৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা বাহিনীও মাঠে আছে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে।
বিজিবি সদরদফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবির ৫ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
উৎসবমুখর পরিবেশ:
দীর্ঘ বিরতির পর নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কেউ প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন, কেউ আবার আগ্রহভরে অংশ নিচ্ছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনরাগমনে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন,
এটা শুধু নির্বাচন নয়, এটা আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রত্যাবর্তন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নিজের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে আমরা সবাই রোমাঞ্চিত।
আরো পড়ুন : শাহবাগে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালনের ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের
পটভূমি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি। ১৯৮৯ সালের পর নানা জটিলতা ও প্রশাসনিক কারণে নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে—যে রাকসু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নীতি, নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে আবারও তার ঐতিহ্যে ফিরবে।