Tuesday, August 26, 2025
Home১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল: প্রায় ৬০ হাজার পদ শূন্য, এনটিআরসি এর...

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল: প্রায় ৬০ হাজার পদ শূন্য, এনটিআরসি এর কি পদক্ষেপ

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪১ হাজার জনকে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, প্রায় ৬০ হাজার পদ এখনও খালি থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়েও নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করছে।

প্রিলিমিনারি থেকে মৌখিক: ধাপে ধাপে ঝরে পড়া

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) জানিয়েছে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন, উত্তীর্ণ হন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০ জন, উত্তীর্ণ হন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ৮১ হাজার ২০৯ জন, এবং চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন ৬০ হাজার ৬৩৪ জন।

কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সকলকে নিয়োগে সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। এনটিআরসিএ জানিয়েছে, নিয়োগের শর্ত পূরণ না হওয়া এবং প্রার্থীর পছন্দ অনুযায়ী পদ না থাকায় প্রায় ২০ হাজার উত্তীর্ণ প্রার্থী সুপারিশ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি। ফলে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন ৪১ হাজার জন।

যোগ্য প্রার্থীই মিলছে না

এনটিআরসিএর সদস্য (যুগ্ম সচিব) ইরাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, “আমরা যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক প্রার্থী শিক্ষক নিবন্ধনের শর্তই পূরণ করতে পারছে না। ইবতেদায়ি মৌলভি পদে প্রায় ৮ হাজার শূন্য পদ থাকলেও পাস করেছেন মাত্র ৯০০ জন। সহকারী শিক্ষক (চারু ও কারুকলা) পদে প্রায় ৯ হাজার শূন্য পদ, সেখানে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৫০০ জন। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

আরো পড়ুন:

২০২৩ সালের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এত বড় সংখ্যক পদ শূন্য থাকা দেশের শিক্ষার মানের ওপর প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে অনেকেই চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না।

আগের পরীক্ষাগুলোর ধারা

এনটিআরসিএর আগের পরীক্ষার ফলাফলেও একই ধারা দেখা যায়। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৯.৫ লাখ প্রার্থী অংশ নেন, চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হন মাত্র ১৮.৫ হাজার। ১৭তম পরীক্ষায় ২৪ লাখ ১০ হাজার ৯৬২ জন আবেদন করেছিলেন, উত্তীর্ণ হন ২৩ হাজার। ১৮তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার কিছুটা বেশি হলেও দেশের চাহিদা পূরণে তা যথেষ্ট নয়।

উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব

সম্প্রতি বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়ন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন বেকারের মধ্যে ২৮ জনই উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলও এই বাস্তবতাকে স্পষ্ট করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, “শিক্ষার মান নিয়ে বহু বছর ধরে প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া সেই প্রশ্নকে আরও প্রকট করছে। ১ লাখ ৮২২টির পদের বিপরীতে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র ৪১ হাজার। ৬০ হাজার পদ খালি। ১৬ ও ১৭তম পরীক্ষাতেও পদ খালি ছিল। এমন বিপুলসংখ্যক পদ খালি রেখে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলছে? জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া উচিত। তবে তার আগে শিক্ষকদের বেতন, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে।”

মানসম্পন্ন শিক্ষা-চ্যালেঞ্জ

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, আবেদনকারীর সংখ্যা লাখ লাখ হলেও যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সতর্কবার্তা। শুধু ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন সঠিক দক্ষতা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতিগত দক্ষতা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শিক্ষক নিয়োগে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, তা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে সংকট আরও গভীর হবে।”

সামনের পথ

৬০ হাজার পদ শূন্য থাকায় আগামী শিক্ষাবর্ষে অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষক–সংকটে পড়তে পারে। এনটিআরসিএ জানিয়েছে, পরবর্তী নিবন্ধন পরীক্ষা ও বিশেষ নিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পদ পূরণের চেষ্টা চলবে।

চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “মানসম্মত প্রার্থী না পাওয়ায় প্রতিবছরই অনেক পদ ফাঁকা থাকে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সংকট নিরসনের জন্য আমরা একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করছি, যা শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”

শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধুমাত্র নিয়োগ কার্যক্রম বাড়িয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। শিক্ষক তৈরির পর্যায়ে মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকবে, আর শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন থাকবে।

Ratan Datta
Ratan Datta
আমি রতন দত্ত "স্টার শান্ত" ওয়েবসাইটে ম্যানেজিং ও এডিটর হিসেবে নিয়োজিত রয়েছি। আমি খেলাধুলা, অটোমোবাইল, বিনোদন ও বিভিন্ন বিষয় লেখালেখি করি এবং আমার লক্ষ্য আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সহজে বোঝানো।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ