বাংলাদেশে গণভোট এই শব্দটি আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রতিবারই তা ছিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেওয়ার ঘটনা। এবার সংবিধান সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় এসেছে গণভোট। প্রশ্ন উঠছে, এটি কি সংসদ নির্বাচনের আগে, না একসঙ্গে আয়োজন করা হবে?
বাংলাদেশে প্রথম গণভোট হয় ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে। উদ্দেশ্য ছিল সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বৈধতা যাচাই। সরকারি হিসেবে ভোট পড়ে ৮৮.১ শতাংশ, এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ ভোট ছিল ৯৮.৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় গণভোট হয় ১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। জনগণের আস্থা যাচাইয়ের জন্য অনুষ্ঠিত এই ভোটে ৭২.২ শতাংশ ভোটার অংশ নেন, এর মধ্যে ৯৪.৫ শতাংশ ভোট পড়ে ‘হ্যাঁ’ বাক্সে।
সবশেষ গণভোট হয় ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। এতে ৩৫.২ শতাংশ ভোটার অংশ নেন। সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ৮৪.৩৮ শতাংশ।
এবার গণভোট কেন আলোচনায়
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। জুলাই সনদের বৈধতা দিতে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। তবে বিতর্ক রয়ে গেছে সময় নিয়ে নির্বাচনের আগে, না একসঙ্গে?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই সনদের বৈধতা দিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এবার গণভোটের মূল উদ্দেশ্য।
আরো পড়ুন:নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের রেজু আমতলী এলাকায় বিস্ফোরণস্থল
বিশেষজ্ঞদের মত
সংসদবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, সংসদ নির্বাচনের আগে আলাদা করে গণভোট আয়োজন অযৌক্তিক এবং ব্যয়বহুল হবে। তাঁর মতে, দুটি নির্বাচন আয়োজনের মতো সময় বা সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শ. ম. আলী রেজা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি পরস্পরের প্রতি আস্থা রাখে, তাহলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।
ভবিষ্যতে আরও দুটি গণভোটের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সামনে দেশে আরও দুটি গণভোট হতে পারে একটি জুলাই সনদের বৈধতা যাচাইয়ে এবং আরেকটি সংবিধান পরিবর্তনের পর জনগণের ম্যান্ডেট নিতে।