
স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী:বর্তমানে বিশ্ববাজারে স্বর্ণ যেন একমাত্র “বিশ্বস্ত বন্ধু”। ডলারের পতন, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি আর ফেডের উপর চাপ সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভরসা রাখছেন স্বর্ণে। ইতিহাস বলছে, সংকটকালে সোনা কখনও হতাশ করেনি। আর তাই আবারও সেই পুরনো প্রবণতাই ফিরে বিনিয়োগকারীগণ, কারণ লাভজনক এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ। আপনি যদি এখনই সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে লাভবান হবার চান্স থাকবে।
বাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী
বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন করে উদ্বেগ, যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিবর্তে স্বর্ণে আগ্রহ বাড়ছে। এই প্রবণতা বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে স্পট ও ভবিষ্যৎ মার্কেটে স্বর্ণের দর একটানা উপরে উঠছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বড়সড় একটি বার্তা বহন করছে।
মার্কিন শুল্কনীতি: সংকট না সম্ভাবনা?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে পড়েছেন। অনিশ্চিত বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে স্বর্ণ হয়ে উঠছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এতে করে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মূল্যও।
ডলার দুর্বল হলে কি হয়?
ডলারের দরপতনের প্রভাবও এই দাম বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মঙ্গলবার ডলার সূচক ০.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর ফলে অন্যান্য মুদ্রার দেশগুলোর জন্য স্বর্ণ কেনা আরও সহজ হয়ে উঠেছে। এতে বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের চাহিদা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেছে।
ফেডারেল রিজার্ভের ওপর রাজনৈতিক চাপ
ট্রাম্প এক নোটে ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, মার্কিন সুদের হার জাপান ও ডেনমার্কের মতো নিচু রাখা উচিত। এই রাজনৈতিক চাপও বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্ঠি করছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, সুদের হার কমলে ডলার আরও দুর্বল হতে পারে, এবং স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে।
সোনা ছাড়া অন্যান্য মূল্যবান ধাতু কী বলছে?
স্বর্ণ ছাড়াও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুগুলোর দামেও দেখা গেছে পরিবর্তন:
- স্পট সিলভার: বেড়ে ৩৬.১৬ ডলার
- প্ল্যাটিনাম: স্থিতিশীল, ১,৩৫২.৪৯ ডলার
- প্যালাডিয়াম: বেড়ে ১,১১৩.১৮ ডলার
এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে সোনা ছাড়াও অন্যান্য ধাতুর দামেও চাহিদার চাপ পড়ছে।
আসছে বড়সড় অর্থনৈতিক প্রতিবেদন
এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার সম্পর্কিত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট আসবে। সরকারি বেতন-ভাতা সংক্রান্ত তথ্য বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই রিপোর্টগুলোর ভিত্তিতে ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ফলে আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণের দামে আরও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: ২ জুলাই আজকের সোনার দাম ২০২৫ | Gold Price Bangladesh
বিনিয়োগকারীদের কৌশল এখন কী?
বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বা বন্ড বাদ দিয়ে নিরাপদ বিকল্পের সন্ধান করছেন। আর সেক্ষেত্রে স্বর্ণই হয়ে উঠছে প্রথম পছন্দ। ইতিহাস বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় স্বর্ণের দিকেই সবাই ঝুঁকে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিও সেই ধারায় যাচ্ছে।
বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে স্বর্ণের চাহিদা এবং দাম, দুটিই বাড়বে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ডলারের অবস্থা, ট্রাম্পের নীতি এবং আসন্ন অর্থনৈতিক রিপোর্ট সবকিছুই একটি পরিবর্তনশীল পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে স্বর্ণ যেন একমাত্র স্থিতিশীল আবাসন হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীদের।