বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য বিশেষ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জাতীয় পে কমিশন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কমিশনের একজন সদস্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তবে সামরিক ও বেসামরিক অন্যান্য পেশাজীবীরা এ সুবিধা পাবেন না।
কমিশনের একজন সদস্য জানান, চিকিৎসা, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে মেধাবীরা দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই এসব বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেও প্রশাসনিক ক্যাডার বা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এতে দক্ষতার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি উদ্ভাবনী ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে নতুন বেতন কাঠামোতে আলাদা ভাতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন, তারাও এই সুবিধার আওতায় আসবেন। এর আগে সশস্ত্র বাহিনী ও বিচারকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারিত ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতিরিক্ত ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার চিকিৎসা, প্রকৌশল, গবেষণা ও উদ্ভাবনী পেশায় কর্মরতদের জন্যও এ বিশেষ ভাতা সুপারিশ করা হচ্ছে।
পে কমিশনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে বেতন-ভাতা এবং কর আরোপে বৈষম্য দূর করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের অনেক ভাতা করমুক্ত হলেও বেসরকারি চাকরিজীবীরা একই সুবিধা পান না। কমিশন বলছে, নতুন প্রতিবেদনে এই বৈষম্য দূর করার প্রস্তাব থাকবে।
প্রতিবেদন তৈরিতে বেসরকারি খাতের মতামতও নেওয়া হবে। এজন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা তৈরি করে জরিপ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আরো দেখুন: শাপলার শহীদদের রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদানের দাবি জানালেন মামুনুল হক
গত জুলাই মাসে সরকার সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে জাতীয় পে কমিশন গঠন করে। কমিশন নতুন বেতন কাঠামোর পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাবও বিশ্লেষণ করছে। এ লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা চলতি মাসেই কমিশনের হাতে আসবে।
বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। সামরিক বাহিনী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি শিক্ষকদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি।