
লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়
পশ্চিম লন্ডনের হেইস এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়, যার কারণে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দর রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ
বৃহস্পতিবার রাতে সাবস্টেশনে আগুনের সূত্রপাত হয়। এটি হিথ্রো বিমানবন্দর এবং আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। রাত ১১:২৩ মিনিটে জরুরি পরিষেবাগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়। আগুন নেভাতে ৭০ জন দমকলকর্মী এবং ১০টি ফায়ার ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের ১৫০ জন মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখনও আগুন লাগার কারণ তদন্তাধীন রয়েছে।
হিথ্রো বিমানবন্দরের উপর প্রভাব
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিথ্রো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে। এতে ১,৩০০-র বেশি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং এক লাখেরও বেশি যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়। বিমান সংস্থাগুলো বিকল্প ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে। গ্যাটউইক ও আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরে কিছু ফ্লাইট স্থানান্তর করা হচ্ছে। যাত্রীদের হিথ্রো এড়ানোর এবং তাদের বিমান সংস্থার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ব্যাপকতা
এই আগুনের ফলে হেইস এলাকার কয়েক হাজার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। স্কটিশ ও সাউদার্ন ইলেকট্রিসিটি নেটওয়ার্কস জানিয়েছে যে ১৬,৩০০-রও বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে, তবে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
জরুরি প্রতিক্রিয়া
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সহকারী কমিশনার প্যাট গোলবর্ন জানান, দমকলকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আগুন নেভাতে এবং ক্ষতি কমানোর জন্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের এলাকাটি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের জন্য নির্দেশনা
হিথ্রো থেকে যাত্রার পরিকল্পনা করা যাত্রীদের বিমানবন্দরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। পরিবর্তে, তাদের উচিত সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা এবং আপডেট জানা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজসহ অন্যান্য বিমান সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ফ্লাইট স্থানান্তর ও বিভ্রাট
বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইউরোকন্ট্রোল এয়ার ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে হিথ্রোতে সব ফ্লাইটের আগমন বন্ধ রাখা এবং অন্যান্য বিমানবন্দরে ফ্লাইট স্থানান্তরের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত। কিছু ফ্লাইট তাদের গন্তব্যে ফিরে গেছে, আবার কিছু বিমান বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
আরো পড়ুন: London Heathrow Airport Shuts Down Due to Massive Fire at Electrical Substation
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলের চারপাশে ২০০ মিটার নিরাপত্তা এলাকা ঘোষণা করেছে। এটি দমকলকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে। যেসব মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য সহায়তা পরিষেবা চালু রয়েছে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
এটি প্রথমবার নয় যে হিথ্রো বিমানবন্দর আগুনের কারণে ব্যাহত হয়েছে। ২০১০ সালের জুন মাসে, কাছের একটি স্ক্র্যাপইয়ার্ডে আগুন লাগার ফলে প্রচুর ধোঁয়া তৈরি হয়েছিল, যার কারণে ফ্লাইট চলাচলে সমস্যা হয়। একইভাবে, ২০১০ সালের এপ্রিলে, নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে ছোট একটি অগ্নিকাণ্ডের কারণে নয়টি ফ্লাইট গ্যাটউইক বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
অর্থনৈতিক প্রভাব
হিথ্রো বিমানবন্দরের বন্ধ থাকা শুধু যাত্রীদের নয়, বৈশ্বিক ব্যবসার জন্যও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ভ্রমণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে ব্যবসায়িক সরবরাহ ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের বিলম্ব হতে পারে। আগামী কয়েক দিনে এর অর্থনৈতিক প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।
ভবিষ্যৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
এই ঘটনার পর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর জন্য আরও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নতুন কৌশল নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
ভ্রমণকারী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন এবং তথ্য জানতে চাইছেন। বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করে যাত্রীদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে।
হেইসের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আগুন লেগে হিথ্রো বিমানবন্দর এবং আশপাশের এলাকায় নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। জরুরি পরিষেবাগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। যাত্রীদের সচেতন থাকতে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।