ফুটবলের সেই রাতটা যেন রোনালদোর চোখে মিশে গেল আনন্দ আর আক্ষেপের রঙে।
একদিকে রেকর্ডের নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে ইতিহাসে নাম লেখালেন এই পর্তুগিজ তারকা,
অন্যদিকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে তাঁর দলের মুখে ভেসে উঠল হতাশা।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে, আনন্দে মাতল ইংল্যান্ড-যারা ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে
নিশ্চিত করেছে ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা।
রোনালদোর রেকর্ড, কিন্তু থেমে গেল পর্তুগাল
হাঙ্গেরির বিপক্ষে মাঠে নামা মানেই ছিল একটাই লক্ষ্য-জয় মানেই বিশ্বকাপ টিকিট।
কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খায় পর্তুগাল। ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিটেই গোল খেয়ে বসে তারা।
তবে কে থামাবে রোনালদোকে? ২২ মিনিটে সমতা ফেরানোর পর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েই
আরেকটি গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় সমতায় ফেরে হাঙ্গেরি।
দমিনিক সোবোসলাইয়ের গোলই থামিয়ে দেয় রোনালদোদের জয়যাত্রা।
ফলাফল-২-২ ড্র, আর বিশ্বকাপের জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে পর্তুগালকে।
এই ড্রয়ের পর ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ ড্র নিয়ে পর্তুগালের পয়েন্ট ১০, গ্রুপের শীর্ষে থাকলেও
তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে পরের ম্যাচগুলোর ফলের ওপর।
রোনালদোর ব্যক্তিগত মহিমা
দল না জিতলেও রোনালদো লিখেছেন নতুন ইতিহাস।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোল তাঁর- ৫১ ম্যাচে ৪১টি।
এর আগে তিনি ও গুয়াতেমালার কিংবদন্তি কার্লোস রুইজ যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন ৩৯ গোল নিয়ে।
এই রেকর্ড ভেঙে রোনালদো এখন এককভাবে রাজত্ব করছেন তালিকার শীর্ষে।
সব মিলিয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের গোল এখন দাঁড়িয়েছে ৯৪৮টিতে
অবিশ্বাস্য এক সংখ্যা, যা এখনো থামার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না
ইংল্যান্ডের গর্জন: ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে
রিগার মাঠে যখন ইংল্যান্ড নেমেছিল লাটভিয়ার বিপক্ষে,
তাদের সামনে ছিল সহজ এক সমীকরণ-জিতলেই বিশ্বকাপ।
এবং তারা সেটি করেছে দাপটের সঙ্গেই।
লাটভিয়াকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে হ্যারি কেইনরা।
কেইনের জোড়া গোল, সঙ্গে আন্থনি গর্ডন ও এবেরেচি এজের একটি করে গোল,
আর এক আত্মঘাতী গোল মিলে ইউরোপে প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল ইংল্যান্ড।
এই বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড খেলেছে ৬ ম্যাচ, জিতেছে সবকটিই,
গোল করেছে ১৮টি-একটিও গোল হজম না করেই!
নির্ভুল, শৃঙ্খলিত ও আত্মবিশ্বাসী-একদম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো পারফরম্যান্স।
ইতালির ক্ষীণ আশা টিকে রইল
উদিনেতে নিজেদের মাঠে ইসরায়েলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে
২০২৬ বিশ্বকাপের স্বপ্ন জীবিত রেখেছে ইতালি।
যদিও স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতি ছিল কম, তবু জেনারো গাত্তুসোর দল
এই জয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
এখন তাদের পয়েন্ট ১৫, নরওয়ের পেছনে দ্বিতীয় অবস্থানে।
সরাসরি বিশ্বকাপে যেতে হলে ইতালিকে এখন জিততে হবে
নিজেদের বাকি দুটি ম্যাচ, আর প্রার্থনা করতে হবে-নরওয়ে যেন হারে।
আরও এক ধাপ কাছে স্পেন
স্পেন যেন তাদের আগের ধারায় ফিরছে।
বুলগেরিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে তারা টানা চতুর্থ জয়ে পৌঁছেছে
বিশ্বকাপের আরও এক ধাপ কাছে।
মিকেল মেরিনোর জোড়া গোলের সঙ্গে মিকেল ওয়ার্জাবাল ও
এক আত্মঘাতী গোল মিলে সহজ জয় পেয়েছে লা রোহা।
আরো পড়ুন : হোয়াইটওয়াশ এড়াতে যেমন হতে পারে বাংলাদেশের একাদশ
এই চার ম্যাচে স্পেন করেছে ১৫ গোল-একটিও হজম না করে!
তবু তাদের টিকিট এখনো নিশ্চিত হয়নি কারণ তুরস্ক এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে।
শেষকথা: রোনালদোর গল্প এখনো অসম্পূর্ণ
ইংল্যান্ড যখন বিশ্বকাপের আনন্দে মেতে উঠেছে,
রোনালদো তখন তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে
হয়তো ভাবছেন,এবারই কি শেষ সুযোগ?
রেকর্ডের পাহাড় পেরিয়েও তাঁর চোখে এখন একটাই লক্ষ্য
আরও একবার বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখা।