ওয়াশিংটন, ২১ অক্টোবর (রয়টার্স): ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে নিকট ভবিষ্যতে কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সোমবার এক “গঠনমূলক ফোনালাপ” করলেও, উভয়পক্ষ মুখোমুখি বৈঠকের পথে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি শিগগিরই হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। তবে রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনের আরও কিছু ভূখণ্ড ছাড় দাবি করায় আলোচনায় অগ্রগতি থমকে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান
একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “তাৎক্ষণিক কোনো ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পরিকল্পনা নেই।”
রাশিয়ার বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, বৈঠকের প্রস্তুতি এখনো চলমান, তবে তারিখ চূড়ান্ত হয়নি।
রাশিয়ার দাবি অপরিবর্তিত
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, রাশিয়া গত সপ্তাহে একটি গোপন বার্তায় (“নন-পেপার”) ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আরো পড়ুন: স্বর্ণের দামে বড় ধস: একদিনেই কমলো ৫ শতাংশের বেশি
এতে পুতিনের প্রশাসন কার্যত ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে তিনি বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই যুদ্ধবিরতি শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বর্তমানে রাশিয়া লুহানস্ক প্রদেশের সম্পূর্ণ অংশ ও প্রতিবেশী দোনেৎসকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
ইউরোপীয় নেতাদের আহ্বান
ইউরোপীয় নেতারা মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে পিছিয়ে না আসে। নাটো মহাসচিব মার্ক রুতে ওয়াশিংটনে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে ইউরোপের অবস্থান বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণের আগে “গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি” প্রয়োজন। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা প্রেসিডেন্ট পুতিন কেউই সুনির্দিষ্ট তারিখ দেননি।”
ইউরোপের উদ্বেগ
ইউক্রেনের মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প হয়তো রাশিয়ার কাছ থেকে বাস্তব কোনো ছাড় না পেয়েও দ্বিতীয়বার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা “ট্রাম্পের তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন” করছেন।
কিয়েভের অবস্থান অপরিবর্তিত
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানান, তিনি যুদ্ধবিরতির পক্ষে, যেখানে উভয় পক্ষ বর্তমান অবস্থানেই লাইন স্থির রাখবে। যদিও বৈঠকের সময় উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছিল বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জেলেনস্কি দাবি করেছেন—ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থনই কিয়েভের জন্য বড় অর্জন।
হাঙ্গেরিকে ঘিরে কূটনৈতিক টানাপোড়েন
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ইউরোপে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বুদাপেস্টে সম্ভাব্য বৈঠকের সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। পোল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে, পুতিন যদি তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করেন, তবে তাকে আন্তর্জাতিক পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হতে পারে, যদিও বুলগেরিয়া জানিয়েছে, পুতিন চাইলে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারেন।