Wednesday, October 22, 2025
Homeরাশিয়ার তেল নিয়ে ট্রাম্পের দাবি অস্বীকার ভারতের, কূটনীতিতে কোন পথে মোদি সরকার?

রাশিয়ার তেল নিয়ে ট্রাম্পের দাবি অস্বীকার ভারতের, কূটনীতিতে কোন পথে মোদি সরকার?

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধে ভারতের প্রতিশ্রুতির দাবি করে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভারত সেই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লি জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্প্রতি কোনো কথোপকথনই হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াতে পারে, তবে ভারত এখনো ‘ভারসাম্যের কূটনীতি’ বজায় রেখে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পক্ষকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রথমে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব নেওয়া, পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে মোদির প্রতিশ্রুতির দাবি দুই ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার।


ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।এরপর এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন,যদি ভারত এমন কিছু অস্বীকার করে, তাহলে তারা বিপুল শুল্ক দিতে থাক।

এই মন্তব্যই নতুন প্রশ্ন তুলেছে ট্রাম্পের ‘কূটনৈতিক স্টাইল’ আসলে নতুন ধাঁচের নাকি রাজনৈতিক চাপের কৌশল?

সাধারণত কূটনৈতিক আলোচনায় দাবি ও প্রতিক্রিয়া গোপন পর্যায়ে হয়। কিন্তু এবার উল্টোটা ঘটেছে প্রকাশ্যে পালটা বিবৃতি দিচ্ছে দুই দেশই।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন,এভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি এলে সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তা মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।”

সাবেক কূটনীতিক কে সি সিং বলেন,ট্রাম্পের সঙ্গে কূটনীতির দুটি পথ সংঘাত না করে আলোচনার মাধ্যমে এগোনো, অথবা চীনের মতো দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। মোদি সরকার প্রথম পথেই এগোচ্ছে, যা কৌশলগতভাবে সঠিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই চাচ্ছেন ভারত যেন রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে। কিন্তু দিল্লি এখনো সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন,ভারত তার জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়। রাশিয়া শুধু তেলের সরবরাহকারী নয়, ভারতের বড় প্রতিরক্ষা অংশীদারও। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। রাশিয়া ছাড়ের পরিমাণ কিছুটা কমালেও, ভারত এখনো সেখানে ব্যবসায়িক সুবিধা দেখছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় তেলের দাম নিয়েও ভারত সুবিধা চাইছে। অর্থাৎ, দুই দিকের ভারসাম্য রেখেই চলছে ভারতের কূটনীতি।

অরো পড়ুন : আফগানিস্তানে ভারত-পাকিস্তান “ছায়াযুদ্ধ”: সীমান্তে উত্তেজনা ও কূটনৈতিক চাপ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের একতরফা বক্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেভারত কি ট্রাম্পের প্রভাবের অধীনে চলছে?

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী মনে করেন,কূটনীতি গোপনে হওয়াই শ্রেয়। কিন্তু এখন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ