সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন এক চাপে পৌঁছেছে। এই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার বিরল খনিজ ধাতু, যা আধুনিক প্রযুক্তি ও সামরিক শিল্পের জন্য অপরিহার্য। চীনের নতুন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক হুমকি আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই বিরল ধাতু ছাড়া স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন বা এমনকি চিকিৎসা যন্ত্রকেও কল্পনা করা যায় না।
বিরল খনিজ ধাতু: আধুনিক প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র
বিরল ধাতু বলতে ১৭টি বিশেষ ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যেমন স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম ও ল্যানথানাইড সিরিজ। ‘বিরল’ নামটি বিভ্রান্তিকর, কারণ এগুলোর ভূগর্ভে উপস্থিতি কম নয়; তবে আহরণ ও পরিশোধন অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ। এছাড়া, পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর।
স্মার্টফোন, এলইডি বাতি, টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, এমআরআই মেশিন, এমনকি ক্যানসার চিকিৎসাতেও এই ধাতু ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্পেও এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন ও স্যাটেলাইটে বিরল খনিজের ব্যবহার রয়েছে।
চীনের নিয়ন্ত্রণ ও বাজারের প্রভাব
বিশ্বের মোট উত্তোলিত বিরল ধাতুর ৬১% চীন থেকে আসে এবং পরিশোধিত ধাতুর ৯২% চীনের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্ভরশীলতা চীনের কৌশলগত হাতিয়ার। চীন বাজারে দাম কম রেখে নতুন প্রতিযোগীদের প্রবেশ কঠিন করে তোলে।
১৯৯০-এর দশক থেকে চীনের সরকার ও বেসরকারি খনিগুলো ধীরে ধীরে এই খাতকে নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে চায়না নর্দার্ন রেয়ার আর্থ ও চায়না রেয়ার আর্থ গ্রুপ শিল্পটির প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
চীনের নতুন নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষুব্ধ। চীনের নতুন তালিকায় আরও পাঁচটি উপাদান যুক্ত হয়েছে। ট্রাম্প জানান, চীনের এই পদক্ষেপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ১০০% শুল্ক আরোপের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। তিনি এশিয়া সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকও বাতিল করতে পারেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বাণিজ্যযুদ্ধ শুধুই শুল্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রযুক্তি, সম্পদনির্ভর কৌশল ও আন্তর্জাতিক শক্তি ভারসাম্যের নতুন লড়াই।
আরো পড়ুন:দুই দিন পেছাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান
প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতির সংযোগ
এখন পৃথিবীতে তেল বা তথ্যের লড়াই নয়, প্রযুক্তির যুদ্ধ চলছে। সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ বানানোর মূল উপাদান হলো সিলিকন, যার জন্য বিরল খনিজ অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বিকল্প উৎস খুঁজছে, কিন্তু চীনের নিয়ন্ত্রণ ভাঙা সহজ নয়।
ভারত ও পাকিস্তানের বিরল খনিজ সম্পদও এখন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের নতুন কেন্দ্র। তাই এই ধাতু কেবল প্রযুক্তি নয়, বরং বিশ্ববাণিজ্য ও আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যের নতুন নিয়ন্ত্রক।