Thursday, October 23, 2025
Homeমাউশির মহাপরিচালক পদে তদবির-দৌড়ঝাঁপ: বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ লড়াই

মাউশির মহাপরিচালক পদে তদবির-দৌড়ঝাঁপ: বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ লড়াই

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদকে কেন্দ্র করে তদবির ও চাঞ্চল্যের পারদ বেড়েছে। পদপ্রত্যাশী একাংশের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীরবভাবে কিছু মহল পদটিতে নিজের লোক বসানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ শোনা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদটির জন্য আবেদনকারী কয়েকজন পরিচালক ও সিনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিরা এগিয়ে থাকছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার ঘুষ, বদলি-প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং এনসিটিবি চেয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে টাকা দিয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়েও সরাসরি অভিযুক্তরা নিজস্ব প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।

অভিযোগ ও অভিযোগকারীদের দাবি

মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক খান মাইনুদ্দিন সোহেল (১৬তম বিসিএস) ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগের পরিচালক কাজী আবু কাইয়ুম (১৪তম বিসিএস) অন্যান্য আবেদনকারীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন—তবে তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন।

জানাগেছে, খান মাইনুদ্দিন সোহেলের বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন শিক্ষক–কর্মকর্তা বদলি করে প্রায় ৫১ কোটি টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগের পেছনে তার ঘনিষ্ঠ ইকবাল নামের ব্যক্তির ভূমিকা আছে এমন কথাও বলা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে একটি গোষ্ঠী তৎপর। আমি একজন ডিজি প্রার্থী- তাই আমাকে নিয়ে সমালোচনা থাকা স্বাভাবিক। বদলির বিষয়ে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি গল্প মাত্র।”

অন্যদিকে কাজী আবু কাইয়ুম দাবি করেছেন, তার দপ্তরে “কোনও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল” আসে না এবং অনিয়ম করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “বিষয়গুলো সত্য নয়। আমি বিগত সময়ের একটি বঞ্চিত কর্মকর্তা।” তবে মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও জালিয়াতির ধারায় তদন্তও Conduct করেছে বলে সূত্রে জানা যায়।

শিক্ষা উপদেষ্টা ও একান্ত সচিব একেএম তাজকির-উজ-জামানও অনিয়ম-অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, “অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই আমার। ডিজি কে হবেন, সেটা উপদেষ্টা যাচাই-বাছাই করবে। মাউশির ডিজি পদে কোনো টাকার লেনদেন হয়নি।”

প্রতিহিংসা, দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক উদ্বেগ

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর পুরনো শায়েস্তা বদলে গেলেও শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরে আসেনি। বদলি ও নিয়োগকাজে এখনো পার্থক্য দেখা যায়-অনেকে বলছেন বদলি হচ্ছে অর্থ বিনিময়ে, আবার রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ‘পছন্দের’ ব্যক্তি বসানোর চেষ্টা চলছে।

শিক্ষাব্যবস্থার কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, মাউশির ডিজি পদ নিয়োগে চলমান অনিয়ম ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না শুধুমাত্র প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করছে, বরং শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ এবং সার্বিক প্রশাসনিক কাঠামোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাঁরা দাবি করেন—দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংরক্ষণে এখনই সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক নিয়োগব্যবস্থা প্রয়োজন।

দরপত্রের অভিযোগ -বদলিতে নির্ধারিত ‘রেট’

এক ভুক্তভোগী শিক্ষকের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানা গেছে, মাউশির বিভিন্ন পদের জন্য বদলির নির্ধারিত রেটের তালিকা রয়েছে—উপপরিচালক বদলির রেট ১৫ থেকে ২০ লাখ, জেলা শিক্ষা অফিসার ৫ থেকে ১০ লাখ, ঢাকায় প্রধান শিক্ষকের পোস্ট ৫ লাখ, ঢাকার যে কোনো স্কুলে স্থানান্তর ২ লাখ, ঢাকার বাইরে প্রধান শিক্ষক ৩ থেকে ৫ লাখ এবং অন্য স্থানান্তর ১ থেকে ২ লাখ টাকা। এসব সংখ্যাসূচক অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এগুলো অপপ্রচার।

আবেদনকারী ও প্রশাসনের মন্তব্য

মাউশির ডিজি পদের জন্য মোট ৬৩ জন সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা আবেদন করেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মাউশির গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের কয়েকজন পরিচালকসহ বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজনও রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মজিবর রহমান যুগান্তরকে বলেছেন, “মাউশির ডিজি পদপ্রত্যাশীদের আবেদন স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। এতে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই এবং অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

আরো পড়ুন : ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দাবিতে শিক্ষক আন্দোলন: আমরণ অনশন ও কর্মবিরতি ঘোষণা

মাউশির মহাপরিচালক পদটি শিক্ষা প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ। শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় জরুরি সেই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া যেন সম্পূর্ণভাবে সুশাসিত, দলনিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক হয়-এটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে বলেই শিক্ষাসম্ভন্ধীয়রা মনে করেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ নিউজ