
পাকিস্তানের দাবি: উত্তেজনার মধ্যে দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ পর্বে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে তারা গত দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনা ঘটে সাম্প্রতিক সীমান্ত পারাপারের হামলা ও সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মাঝে।
বর্তমান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ২২ এপ্রিল যখন ভারত-শাসিত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিদের দায়ী করে এবং ৭ মে “অপারেশন সিন্দুর” চালায় যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে থাকা কথিত জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
ড্রোন অনুপ্রবেশ ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ (ISPR) জানায়, ভারতের ড্রোনগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমায় একাধিক জায়গায় প্রবেশ করে। এর মধ্যে লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও বাহাওয়ালপুর রয়েছে। ড্রোনগুলো reportedly ছিল ইসরায়েলি Harop ধরনের “loitering munition” বা ঘোরাফেরা করা বিস্ফোরক ড্রোন। পাকিস্তানের দাবি তারা সব ৭৭টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এই অনুপ্রবেশকে তাদের আকাশসীমার গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে আগ্রাসী কাজ বলে চিহ্নিত করেছেন। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারতের অবস্থান
ভারত এখনো পাকিস্তানের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র নিশ্চিত করেছে যে তারা সাম্প্রতিক অভিযানে পাকিস্তানের জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ব্যবহার করেছে। তাদের দাবি, এসব অভিযান ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদী হুমকি দূর করার লক্ষ্যে পরিচালিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক মহল এই বাড়তে থাকা সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ উভয় দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং তাদেরকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর অনুরোধ করেছে। চীন ও সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ও উত্তেজনা কমাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নাগরিক ও অবকাঠামোর ওপর প্রভাব
এই চলমান সংঘাত দুই দেশের সাধারণ মানুষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। পাকিস্তানে লাহোর ও করাচিসহ কয়েকটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভারতে জনপ্রিয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বা অন্য রুটে চালানো হচ্ছে আকাশসীমা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের কারণে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুই দিনে ৭৭টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান সংঘাতের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সবাই চায় পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান যেন পাওয়া যায়।