ভারতের বিলাসবহুল সৌন্দর্যপণ্যের বাজারকে আগামী এক দশকে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছে শীর্ষ আন্তর্জাতিক প্রসাধনী ব্র্যান্ডগুলো। দেশটির তরুণ, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ভোক্তাদের হাতে গড়ে ওঠা এই বাজার ২০৩৫ সালের মধ্যে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেয়ার্নি (Kearney) এবং বিলাসবহুল প্রসাধনী পরিবেশক লাক্সএশিয়া (LUXASIA)।
দ্রুত বাড়ছে ভারতের সম্ভাবনা
২০২৩ সালে ভারতের বিলাসবহুল সৌন্দর্যপণ্যের বাজারের আকার ছিল ৮০০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এটি দেশের মোট সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যত্ন শিল্পের মাত্র ৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে এ খাতের অংশীদারিত্ব ২৫ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে ভারতের বাজারে প্রবৃদ্ধির সুযোগ এখনও বিশাল।
হুলিহান লোকির (Houlihan Lokey) ভারতের করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমীর জিন্দাল বলেন,
“ভারত হলো প্রিমিয়াম বিউটি সেক্টরের প্রবৃদ্ধির শেষ দুর্গ। এখানকার ভোক্তারা নতুন জিনিস চেষ্টা করতে আগ্রহী।”

বিশ্ব ব্র্যান্ডের কৌশল
আমেরিকার এস্টি লডার (Estée Lauder), যার মালিকানায় ক্লিনিক ও ম্যাকসহ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড রয়েছে, ইতিমধ্যে দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কোম্পানির ভারতের কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার রোহান ভাজিরালি জানান, প্রথম ধাপে তারা প্রায় ৬ কোটি নারী ভোক্তাকে লক্ষ্য করছে।
আরো পড়ুন:
টেক্সাসে রিপাবলিকানদের নতুন কংগ্রেশনাল মানচিত্র পাস, ট্রাম্পের সমর্থনে আসন পাল্টানোর উদ্যোগ
চেন্নাইয়ের গৃহিণী আর. প্রিয়াঙ্কা জানান, তিনি এখন সহজেই এস্টি লডারের জো মালোন লন্ডনের সুগন্ধি কিনতে পারছেন।
“প্রতিবার বিদেশ থেকে কাউকে এনে দিতে বলার ঝামেলা আর নেই,” বলেন তিনি।
তীব্র গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ভারতীয় বাজারের জন্য বিশেষভাবে মানিয়ে নিতে হচ্ছে কিছু পণ্য। তবে এখানে দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী তুলনামূলকভাবে খুবই কম। কেয়ার্নি ও লাক্সএশিয়া বলছে, ফরেস্ট এসেনশিয়ালস ও কামা আয়ুর্বেদা ছাড়া উল্লেখযোগ্য স্থানীয় ব্র্যান্ড নেই, যেগুলো মিলে বাজারের ১০ শতাংশেরও কম শেয়ার ধরে রেখেছে।

বাজার দখলে নতুন পদক্ষেপ
- এস্টি লডার অনলাইন বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে ছোট শহরগুলোতেও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে, সিলিগুড়ির মতো শহরও এর লক্ষ্যভুক্ত।
- ব্র্যান্ডটি দেশীয় ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির সঙ্গে কাজ করছে এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় কাজল (আইলাইনার) বাজারে আনছে।
- ফরাসি জায়ান্ট ল’অরিয়াল (L’Oreal) জানিয়েছে, ভারতের তরুণ, ডিজিটাল-সচেতন নারীদের লক্ষ্য করে তারা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
- দক্ষিণ কোরিয়ার আমোরেপ্যাসিফিক (Amorepacific) তাদের ইনিসফ্রি ও এটিউড ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ‘কোরিয়ান বিউটি’ ট্রেন্ড কাজে লাগাতে চাইছে।
- জাপানের শিসেইডো (Shiseido) সম্প্রতি তাদের নার্স (NARS) ব্র্যান্ড ভারতীয় খুচরা বিক্রেতা নাইকার (Nykaa)-তে উন্মুক্ত করেছে।

ই-কমার্স ও খুচরা ব্যবসায় উত্থান
নাইকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা অদ্বৈতা নায়ার জানান, ভারতীয় ক্রেতারা এখন ‘চেরি মেকআপ’-এর মতো নতুন ধারা অনুসরণ করছেন, যেখানে ফ্লাশড চিকস, গ্লসি ঠোঁট আর হালকা গোলাপি চোখের মেকআপ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
অ্যামাজনের ভারতীয় শাখার বিউটি ও ফ্যাশন বিভাগের পরিচালক সিদ্ধার্থ ভগত বলেন, কোম্পানি বিশ্বজুড়ে উদীয়মান ট্রেন্ড দ্রুত ভারতীয় ভোক্তাদের কাছে আনতে কাজ করছে।
এদিকে খুচরা বিক্রেতা শপার্স স্টপ জানিয়েছে, তারা আগামী তিন বছরে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০টি নতুন বিউটি স্টোর চালু করবে, যাতে সৌন্দর্যপণ্যের রাজস্ব অংশীদারিত্ব এক-পঞ্চমাংশ থেকে বেড়ে এক-চতুর্থাংশে উন্নীত হয়।
দেশীয় ব্র্যান্ডের চ্যালেঞ্জ
চীন, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে দেশীয় প্রসাধনী ব্র্যান্ড বাজারের ৪০ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে, ভারতে তা ১০ শতাংশেরও কম। খাতবিশেষজ্ঞ দেবাংশু দত্ত জানান,
“আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে ভারতীয় ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম ইমেজের এখনও বড় পার্থক্য রয়েছে।”
বিশাল বিপণন বাজেট এবং বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ভারতীয় বাজারে আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারছে বলে মনে করছেন শিল্প পর্যবেক্ষকেরা।