বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বিসিবির স্বাধীন তদন্ত কমিটি শিগগিরই তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে যাচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে ভয়ংকর সব তথ্য—শুধু গত পাঁচ আসরেই সন্দেহজনক ঘটনা ধরা পড়েছে ১৪০টির বেশি। এমনকি একটি ম্যাচ হারাতে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দেওয়া হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকার প্রস্তাব!
তদন্তের বর্তমান অবস্থা
তদন্তকাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তদন্ত কমিটির হাতে আছে ৩০০ ঘণ্টার বেশি অডিও রেকর্ডিং এবং সেখান থেকে তৈরি হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথি। এগুলো বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামের কাছে জমা পড়বে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের সঙ্গে রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. খালেদ এইচ চৌধুরী ও সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেম। ড. খালেদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক রিপোর্টে বিসিবিকে সতর্ক করার পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি কাঠামো ও খেলোয়াড় ড্রাফট নিয়ে সুপারিশ থাকবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হবে আগামী মাসে।

অভিযুক্ত খেলোয়াড় ও কোচ
প্রাথমিক তদন্তে গত বিপিএল (২০২৪–২৫) থেকেই সন্দেহজনক ৩৬টি ঘটনার তথ্য মিলেছে। এতে অভিযুক্ত হয়েছেন প্রায় ১০–১২ জন ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে ৩–৪ জনকে ‘হাই ফ্ল্যাগড’ তালিকায় রাখা হয়েছে, অর্থাৎ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেকটাই নিশ্চিত। এই তালিকায় আছেন জাতীয় দলে খেলা এক পেসার ও এক অফ স্পিনার। এছাড়া আলোচিত ওয়াইড দেওয়া এক পেসারকেও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, এক ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ এবং সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরের দলে থাকা একজন ক্রিকেটারের নামও আছে সন্দেহভাজনদের তালিকায়। এমনকি বিসিবির একটি সাব–কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম আসছে
কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, অন্তত তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সরাসরি অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সেগুলো হলো দুর্বার রাজশাহী, সিলেট স্ট্রাইকার্স এবং ঢাকা ক্যাপিটালস। এসব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সাময়িকভাবে বিসিবির ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার সুপারিশ থাকবে রিপোর্টে।
সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানও সন্দেহের তালিকায়
স্পট ফিক্সিংয়ে শুধু খেলোয়াড় ও ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, সম্প্রচারকারী চ্যানেলগুলোরও নাম এসেছে তদন্তে। জানা গেছে, একটি টিভি চ্যানেল অবৈধ বেটিং বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাজার থেকে তুলেছে প্রায় ১৭০–১৮০ কোটি টাকা। তদন্ত কমিটি মনে করে, এভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারকারীরা পরোক্ষভাবে ফিক্সিংয়ে জড়িত।

সীমাবদ্ধতা ও সুপারিশ
স্বাধীন তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিট থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা তারা পাননি। এছাড়া ফরেনসিক তদন্তের সুযোগ না থাকায় অভিযুক্তদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টে এই বিষয়ে আলাদা সুপারিশ থাকবে।
আরো পড়ুন:
তদন্ত কমিটি আরও প্রস্তাব করবে—
- বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে পুনর্গঠন করা
- জাতীয় লিগসহ ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্নীতি দমন ইউনিট সক্রিয় রাখা
- অনলাইন বেটিং বন্ধে আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করা
পরিশেষে
বিপিএলের মতো জনপ্রিয় আসরে ফিক্সিং ও বেটিংয়ের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে বিসিবি এবার সরাসরি কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্টের পর চূড়ান্ত রিপোর্টে অভিযুক্তদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি হতে পারে।