বিশ্ববাজারে টানা উর্ধ্বমুখী ধারা শেষে হঠাৎই সোনার দামে বড় পতন ঘটেছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ২ শতাংশের বেশি কমে যায়। তবে দেশের বাজারে এখনো দাম স্থিতিশীল। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের মনে প্রশ্ন—বাংলাদেশে কি এবার সোনার দাম কমতে পারে?
বিশ্ববাজারে রেকর্ড ভাঙা উত্থান ও পতন
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেলে স্বর্ণের দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৫৬ ডলার ১৯ সেন্টে। এর আগে সোমবার দাম উঠেছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ২১ সেন্টে। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য মার্কিন সোনা ফিউচারও ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৬৯ ডলার ৬০ সেন্টে লেনদেন হয়।
এ পতনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা। টানা দাম বৃদ্ধির পর অনেকেই লাভ ঘরে তুলতে বিক্রির পথে যান, ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে দামে প্রভাব পড়ে।
বাংলাদেশে স্বর্ণের রেকর্ড মূল্য
দেশের বাজারেও সোনার দাম সম্প্রতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রোববার (১৯ অক্টোবর) ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি প্রতি দাম দাঁড়ায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
আরো পড়ুন: আজকের সোনার দাম – ২২ অক্টোবর ২০২৫
চলতি বছরে এটি ছিল ৬৬তম দামের সমন্বয়, যার মধ্যে ৪৮ বার বেড়েছে এবং ১৮ বার কমেছে। তুলনামূলকভাবে, ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার দাম সমন্বয় হয়েছিল—তখন ৩৫ বার বেড়েছিল এবং ২৭ বার কমেছিল।
কেন এভাবে ওঠানামা করছে স্বর্ণের দাম
সোনার দামের এ অস্থিরতার পেছনে রয়েছে একাধিক বৈশ্বিক কারণ—
- সুদের হার কমার সম্ভাবনা: যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমলে ডলার দুর্বল হয়, ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝোঁকেন।
- ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা সংঘাতসহ নানা সংকট স্বর্ণকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা বৃদ্ধি: বিভিন্ন দেশের ব্যাংক স্বর্ণ মজুদ বাড়াচ্ছে, যা দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি: ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাপানের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি এবং মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা (শাটডাউন) বাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
গত দশ বছরের স্বর্ণবাজারের প্রবণতা
- ২০১৪–২০১৫: বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও সুদের হার বৃদ্ধি—সোনার দাম কিছুটা কমে।
- ২০১৬–২০১৯: ব্রেক্সিট ও মার্কিন–চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে দাম বাড়ে।
- ২০২০: কোভিড-১৯ মহামারিতে রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে।
- ২০২১: অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সুদের হার বৃদ্ধিতে দাম সামান্য কমে।
- ২০২২–২০২৩: ইউক্রেন যুদ্ধ ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে আবার বৃদ্ধি।
- ২০২৪–২০২৫: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে রেকর্ড পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পায়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়তে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে এবং সুদের হার বাড়লে দাম কিছুটা কমতেও পারে। ফলে আগামী মাসগুলোতে স্বর্ণবাজারে ওঠানামা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিনিয়োগ ও গয়নার বাজারে স্বর্ণের গুরুত্ব চিরকালীন। তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশে আপাতত দাম স্থির থাকলেও, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রবণতা আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিনিয়োগ বা ক্রয়ের আগে বাজারের গতিপ্রকৃতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।