
দেশে আবারও ফিরছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হলে বা সংসদ ভেঙে গেলে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সে সময় দায়িত্বে থাকবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়া
খসড়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিস্তারিত রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। সংসদ ভাঙার পর বা মেয়াদ শেষের আগে একটি বাছাই কমিটি গঠন হবে। এ কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রতিনিধি। রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা যোগ্য প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবেন।
সাত সদস্যের এই কমিটি “র্যাংকড চয়েজ ভোটিং” পদ্ধতিতে একজনকে বেছে নেবে এবং রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য। প্রয়োজনে দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এ মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়ানো যাবে।
জুলাই সনদে সংস্কার প্রস্তাব

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মোট ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে আছে—
- স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে শক্তিশালী করা,
- জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন,
- রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা,
- সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা,
- দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগপদ্ধতি সংস্কার,
- নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
এছাড়া দ্বিতীয় পর্বে আরও ১১টি সাংবিধানিক সংস্কারে ঐকমত্য হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও পুলিশ কমিশন গঠন।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় প্রবাসীর স্ত্রী ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালালেন
ভিন্নমত ও বিশেষ মর্যাদা
সব প্রস্তাবে একমত না হওয়ায় বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, জাসদ, সিপিবি ও বাসদসহ কয়েকটি দল।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে এর বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদসংক্রান্ত ব্যাখ্যার এখতিয়ার থাকবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আরেক দফা আলোচনা শেষে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।