হঠাৎ আগুনে আতঙ্কিত মহাখালী
রোববার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবের বিপরীতে অবস্থিত ইউরেকা ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে হঠাৎ দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র আতঙ্ক। মুহূর্তেই আশপাশের মানুষ দৌড়াতে শুরু করেন নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য।
আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকে চিৎকার, ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং আগুনের শিখা দূর থেকে চোখে পড়তে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের বিলম্ব
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালেদ গণমাধ্যমকে জানান,
“সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিটে আমরা আগুন লাগার সংবাদ পাই। এরপর ঘটনাস্থলে মোট ১০টি ইউনিট পাঠানো হয়। তবে মহাখালী এলাকায় তীব্র যানজটের কারণে ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।”
অর্থাৎ, খবর পাওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পরও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। রাজধানীর যানজট কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, এই ঘটনাই তার বড় উদাহরণ।
হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকিতে
ঘটনাস্থলের পাশেই রয়েছে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাওয়া ক্লাব। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান:
- আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে কয়েকশো মিটার দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
- অনেকে দ্রুত বাসাবাড়ি ও দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান।
প্রাথমিকভাবে কারণ জানা যায়নি
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে:
- গ্যাস ট্যাংক বা জ্বালানি সংরক্ষণ ব্যবস্থায় কোনো বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
- আবার বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে তদন্ত ছাড়া সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ঢাকা শহরের জন্য বড় সতর্কবার্তা
রাজধানীতে যেকোনো সময় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে যানজটের কারণে দমকল বাহিনী দ্রুত পৌঁছতে না পারলে বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। মহাখালীর এই ঘটনাই আবারও সেই বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি সেবার গাড়িগুলোর জন্য বিশেষ লেন বা অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে এরকম পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, একবার ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরপরই তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কয়েকটি ইউনিট ইতিমধ্যেই পানি ছিটাতে শুরু করেছে। তবে পেট্রোল পাম্পে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত নেভানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ ঘটনায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিংবা কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মহাখালীতে ইউরেকা ফিলিং স্টেশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আবারও প্রমাণ করলো, ঢাকার মতো জনবহুল শহরে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কতটা জরুরি। যানজটে আটকা পড়ে ফায়ার সার্ভিস সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে ঝুঁকিতে পড়বে অসংখ্য মানুষের জীবন ও সম্পদ।