ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনের কাজ শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে ব্যস্ত দিন
সোমবার দিনভর হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। দীর্ঘ কয়েক দফা আলোচনার পর সন্ধ্যায় তিনি জানান, যুদ্ধ বন্ধে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, বৈঠক চলাকালে তিনি পুতিনকে ফোন করেন। প্রায় ৪০ মিনিটের সেই ফোনালাপে যুদ্ধবিরতি ও বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
ট্রাম্প বলেন, “ওই বৈঠকের পর আমাদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। আমি বিশ্বাস করি, এটি প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতি
হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসসহ ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জার্মানির চ্যান্সেলর মের্ৎস জানান, ট্রাম্পের ফোনালাপের পর পুতিন দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। তবে স্থান ও তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, “আজকের বৈঠক ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বৈঠক। পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
তিনি আরও জানান, বৈঠকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো এই নিশ্চয়তা দেবে।
আরো পড়ুন:
শেষ দিনে ডাকসুর ফরম নিলেন ৪৪২ জন, মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬৫
ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া
ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে ট্রাম্পকে “বাস্তববাদী শান্তিপ্রতিষ্ঠাকারী” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প চাপ দিচ্ছেন, আবার সমাধানের পথও খুঁজছেন। পুতিনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করাটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ।”

ফ্রান্সের অবস্থান
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ জানান, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনাদের শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি তিনি সতর্ক করেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে না আসে তবে ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এ পর্যন্ত হাজারো প্রাণহানি ও লাখো মানুষের বাস্তুচ্যুতির পরও যুদ্ধ থামেনি। শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠক আয়োজনের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
পরিশেষে
যদিও বৈঠকের তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত হয়নি, তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ট্রাম্পকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনাও চলছে।