চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বুধবার বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন শান্তি ও যুদ্ধের দ্বিমুখী সংকট নিয়ে। অনুষ্ঠানে তার পাশে ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।
বিলাসবহুল এই আয়োজন করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের ৮০ বছর পূর্তিকে স্মরণ করে। পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ নেতারা অনুষ্ঠানটি এড়িয়ে গেলেও পুতিন ও কিম ছিলেন প্রধান অতিথি। তাদের উপস্থিতি চীনের কূটনৈতিক বার্তাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

শি তার ভাষণে বলেন, “মানবজাতি আজ শান্তি না যুদ্ধ, সংলাপ না মুখোমুখি সংঘাত, পারস্পরিক জয় না শূন্য যোগফলের দ্বন্দ্ব—এই পছন্দের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।”
খোলা গাড়িতে কুচকাওয়াজে যোগ দিয়ে শি সেনাদের অভিবাদন জানান এবং ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও ড্রোনসহ আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পরিদর্শন করেন। আকাশে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান প্রদর্শনের পাশাপাশি ৮০ হাজার সাদা কবুতর ও রঙিন বেলুন উড়ানো হয়, যা পুরো অনুষ্ঠানকে প্রতীকী তাৎপর্যে ভরিয়ে তোলে।

রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক কুচকাওয়াজ কেবল শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ইঙ্গিতও বহন করে। গত জুনে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়, যার অনুরূপ একটি জোট গঠনের সম্ভাবনা বেইজিংয়ের সঙ্গেও দেখা যাচ্ছে। এতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

পুতিন এ সফরে চীনের সঙ্গে জ্বালানি খাতে নতুন চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। অন্যদিকে কিম এই অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চে যোগ দিয়ে নিজ দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতি নীরব সমর্থন আদায়ের সুযোগ পান।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করল ফোর্বস
চীনের সামরিক আধুনিকায়নের অগ্রগতি তুলে ধরতে এই কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হলেও দেশটির ভেতরে দেশপ্রেম জাগানোর উদ্দেশ্যও স্পষ্ট ছিল। অনুষ্ঠান ঘিরে বেইজিংয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বন্ধ রাখা হয় প্রধান সড়ক ও স্কুল। কয়েক সপ্তাহ ধরে মধ্যরাতে মহড়া চলে এবং সম্ভাব্য কোনো অস্থিরতা ঠেকাতে স্থানীয়ভাবে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও দলীয় সদস্য নিয়োজিত করা হয়।

শি জিনপিংয়ের এই সামরিক প্রদর্শনী চীনের শক্তি, কূটনৈতিক অবস্থান এবং বিশ্ব ব্যবস্থায় তার নতুন ভূমিকা তুলে ধরেছে। পুতিন ও কিমের উপস্থিতি কেবল রাজনৈতিক প্রতীকই নয়, বরং ভবিষ্যতে আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিতও বয়ে এনেছে।