রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পুতিন পাঁচ দফা দাবি তুলেছেন।
সূত্রের খবর, পুতিনের এই দাবিগুলো মেনে নিলে ইউক্রেনের সুমি ও খারকিভ অঞ্চলের অন্তত ৪৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রাশিয়া ছেড়ে দিতে রাজি। এখন এই পাঁচ শর্তই হয়ে উঠেছে ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির মূল চাবিকাঠি। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–জ়েলেনস্কি বৈঠকে উঠবে সেসব প্রসঙ্গ।
পুতিনের পাঁচ দাবি ও বাস্তবতা
১. ডনেৎস্ক ও লুহান্স্ক থেকে ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহার
পূর্ব ইউক্রেনের এই অঞ্চলগুলো রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। পুতিন চাইছেন ইউক্রেন সম্পূর্ণ সেনা সরিয়ে নিক।
বাস্তবতা: ইউক্রেনের জন্য এটি অত্যন্ত কঠিন। সেনা প্রত্যাহার মানে কার্যত অঞ্চলগুলো রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া। তবে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সীমিত কিছু ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
২. ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করলেও আন্তর্জাতিকভাবে এখনও তা বৈধতা পায়নি। এবার পুতিন সরাসরি স্বীকৃতি চাইছেন।
বাস্তবতা: যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের জন্য এটি বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। স্বীকৃতি মানে রাশিয়ার দখলদারিকে বৈধতা দেওয়া। তাই পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে নীরব সমঝোতার রাস্তা খোলা থাকতে পারে।
৩. রাশিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞায় চাপে। তাই পুতিনের অন্যতম দাবি এটি।
বাস্তবতা: আংশিক শিথিলতার সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ কিছু খাতে ছাড় দিতে পারে, বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানি বাণিজ্যে। তবে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে।
৪. ইউক্রেনকে নেটো-তে অন্তর্ভুক্ত না করা
নেটো সদস্যপদ রাশিয়ার কাছে সবসময় লাল রেখা। পুতিন চান ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিক যে তারা নেটোতে যোগ দেবে না।
আরো পড়ুন: ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জুলাই সনদে চূড়ান্ত রূপরেখা
বাস্তবতা: ইউক্রেন নেটোতে যোগ দিতে চাইলেও তা নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব নয়। ইউরোপীয় নেতারা বিকল্প নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারেন, যেমন নেটোর ‘আর্টিকেল ৫’-এর সমতুল্য প্রতিশ্রুতি। ফলে এ দাবি আংশিকভাবে পূরণ হতে পারে।
৫. রাশিয়ান ভাষা ও অর্থডক্স চার্চের স্বাধীনতা
পুতিন চান ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষাকে আঞ্চলিক সরকারি মর্যাদা দেওয়া হোক এবং রাশিয়ান অর্থডক্স চার্চ অবাধে কাজ করতে পারে।
বাস্তবতা: ইউক্রেনের সাংবিধানিক সীমার মধ্যে আংশিক ছাড় দেওয়া সম্ভব। ভাষা ও ধর্মের প্রশ্নে সমঝোতা তুলনামূলকভাবে সহজ হতে পারে।
ট্রাম্পের ভূমিকা ও ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি
আলাস্কার বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেছেন, এখন বল জ়েলেনস্কির কোর্টে। তবে ইউরোপকেও সমান দায়িত্ব নিতে হবে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখনো বিভক্ত-কেউ সমঝোতার পথে হাঁটার পক্ষে, কেউ আবার রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখার পক্ষে।
আরো পড়ুন: বগুড়ায় প্রবাসীর স্ত্রী ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালালেন
পুতিনের পাঁচ দাবির মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও ভাষা-ধর্মের প্রশ্নে সমঝোতার সুযোগ আছে, কিন্তু ক্রাইমিয়া স্বীকৃতি ও ডনেৎস্ক–লুহান্স্ক থেকে সেনা প্রত্যাহার ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প কি জ়েলেনস্কিকে বোঝাতে পারবেন নাকি যুদ্ধবিরতির পথ আবারও আটকে যাবে-সেদিকেই এখন দৃষ্টি বিশ্ববাসীর।